কুরবানী ঈদের আগে চুল নখ কাটা কি নিষেধ ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। অনেকেই বলে যে ব্যক্তি কুরবানি দিবে সে যিলহজ্ব মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানি করার আগ পর্যন্ত চুল, নখ ও শরীরের যে কোন পশম কাটতে পারবে না এই কথা কি ঠিক ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

যিলহজ্ব মাসের চাঁদ ওঠা থেকে নিয়ে কুরবানীর আগ পর্যন্ত কুরবানীদাতার জন্য চুল, নখ না কাটা মুস্তাহাব।
যারা কুরবানী করবে না তারাও চাইলে এই আমলটি করে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারেন। কেউ যদি এই সময়ে চুল, নখ কাটে এতে উনুত্তম হবে গোনাহ হবে না। তবে চল্লিশ দিন অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নখ, গোঁফ এবং নাভির নিচের লোম কেটে ফেলতে হবে।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا رَأَيْتُمْ هِلاَلَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ

১.অর্থ: উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৫৭ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫২৩ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ فَقَالَ الرَّجُلُ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا قَالَ لَا وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ وَتَقُصُّ شَارِبَكَ وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ

২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.)
থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা এই উম্মতের জন্য একে সাব্যস্ত করেছেন। তখন ঐ ব্যক্তি বললোঃ যদি আমি দুধপান করার জন্য অন্যের দান করা পশু ব্যতীত অন্য কিছু না পাই, তাহলে কি আমি তাই কুরবানী করবো ? তিনি বললেনঃ না, কিন্তু তুমি তোমার চুল, নখ কেটে ফেলবে এবং গোঁফ ছোট করবে এবং তোমার নাভির নীচের পশম কামাবে;
এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৩৬৫ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ১৪৭৯)

তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। হাকীম (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। (তাখরীজু সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৯১৪ মুসতাদরাকে আলা সহীহাইন ৭৭৩৬)

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল, নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يومًا

৩.অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাভীর নীচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে- মুহা. সাইফুল ইসলাম খান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।