প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই নফল নামায আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায় করা যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
যে ব্যক্তি নফল নামায আদায় করছে তার পিছনে ফরয নামায আদায় করা জায়েয নয়। তবে ফরয আদায়কারীর পিছনে নফলের নিয়তে নামায আদায় করা জায়েয আছে। নবী (ﷺ) এর অসংখ্য হাদীসের মধ্যে কোন সহীহ হাদীসেই নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয নামায আদায় করার কথা বলেননি। বরং এর বিপরীত হাদীস নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যেমন:-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلاَ تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ
১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বলেছেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তোমরা কখনো তার উল্টো করো না। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮১৫ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে ইমামের উল্টো কোন কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মানে হলো ইমাম যেই ওয়াক্তের নামায পড়বে মুক্তাদীরাও সেই ওয়াক্তের নামায পড়বে। ইমাম ফরয নামায পড়লে মুক্তাদীরাও ফরয নামায পড়বে। ইমাম নফল পড়লে মুক্তাদীরাও নফল পড়বে কোন ক্রমেই ইমামের উল্টো করবে না। সুতরাং ইমাম নফল নামায আদায় করলে তার পিছনে ফরয নামাযের নিয়ত করা কোন ভাবেই জায়েয হবে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ
২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,ইমাম হল (মুসল্লীদের নামাযের) যিম্মাদার আর মুয়াযযিন হল (ওয়াক্তের) আমানতদার। হে আল্লাহ ইমামকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন আর মুয়াযযিনকে মাফ করুন। (ইফা.সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২০৭ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫১৭ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: এই হাদীসে ইমামকে মুসল্লিদের যিম্মাদার বলা হয়েছে। অথচ নফল আদায়কারী কখনো ফরয আদায়কারীর যিম্মাদার হতে পারে না। কারণ ফরযের গুরুত্ব ও মর্যাদা নফলের চেয়ে বহুগুণ উর্ধ্বে। আর এ কথা সবারই জানা উঁচু স্তরের জিনিস কখনো তার নিচু স্তরের জিনিসের যিম্মাদার হতে পারে না। সুতরাং নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয নামায আদায় করা জায়েয নয়।
عَنْ صَالِحِ بْنِ خَوَّاتٍ، عَمَّنْ شَهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ ذَاتِ الرِّقَاعِ صَلَّى صَلاَةَ الْخَوْفِ أَنَّ طَائِفَةً صَفَّتْ مَعَهُ، وَطَائِفَةٌ وُجَاهَ الْعَدُوِّ، فَصَلَّى بِالَّتِي مَعَهُ رَكْعَةً، ثُمَّ ثَبَتَ قَائِمًا، وَأَتَمُّوا لأَنْفُسِهِمْ ثُمَّ انْصَرَفُوا، فَصَفُّوا وُجَاهَ الْعَدُوِّ، وَجَاءَتِ الطَّائِفَةُ الأُخْرَى فَصَلَّى بِهِمِ الرَّكْعَةَ الَّتِي بَقِيَتْ مِنْ صَلاَتِهِ، ثُمَّ ثَبَتَ جَالِسًا، وَأَتَمُّوا لأَنْفُسِهِمْ، ثُمَّ سَلَّمَ بِهِمْ
৩.অর্থ: সালেহ ইবনে খাওয়াত (রা.) এমন একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে সালাতুল খওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল সাহাবী রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সঙ্গে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকাত নামায আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর মুক্তাদীগণ নিজেরা তাদের নামায পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত আদায় করে স্থির হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদীগণ তাদের নিজেদের নামায পূর্ণ করলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪১২৯ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: যদি নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয নামায আদায় করা জায়েযই হতো, তাহলে সালাতুল খওফ তথা ভয়কালীন নামায এতো কষ্ট করে এক এক রাকাত করে পড়ার কোনই প্রয়োজন ছিল না। বরং একই ইমাম দুই দলকে দই বার খুব সহজেই পৃথক পৃথক ভাবে নামায পড়াতে পারতেন। প্রথম দলের ক্ষেত্রে ফরযের নিয়ত আর দ্বিতীয় দলের ক্ষেত্রে নফলের নিয়ত করলেই হতো।
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، – يَعْنِي مَوْلَى مَيْمُونَةَ – قَالَ أَتَيْتُ ابْنَ عُمَرَ عَلَى الْبَلاَطِ وَهُمْ يُصَلُّونَ فَقُلْتُ أَلاَ تُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ قَدْ صَلَّيْتُ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ تُصَلُّوا صَلاَةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ ”
৪.অর্থ: সুলাইমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রা.) এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মদীনার নিকটবর্তী বালাত নামক স্থানে আসি। আমি তাদেরকে নামাযেরত পাই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কেন তাদের তাদের সাথে নামায আদায় করছেন না ? তিনি বলেন, আমি ইতিপূর্বে জামাতে নামায আদায় করেছি। আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা একই ফরয নামায একই দিনে দুইবার আদায় করো না। (অর্থাৎ একই নামায ফরয হিসেবে দুইবার আদায় করা যাবে না, বরং পরবর্তী নামাযটি নফল হিসাবে আদায় করা যেতে পারে) (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৯ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮৬০ হাদীসের মান: হাসান)
جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كَانَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَرْجِعُ فَيَؤُمُّ قَوْمَهُ
৫.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) নবী (ﷺ) এর সঙ্গে নামায আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭০০ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি দলিলযোগ্য নয় তার দুটি কারণ। ১. এটা ইসলামের প্রাথমিক যুগের। তখন মুয়ায (রা.) ছাড়া তার গোত্রের অন্য কেউ ভালো ভাবে কুরআন পড়তে পারতো না। ফলে তিনি নবী (সা.) এর সঙ্গে নামায আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। সুতরাং ঐ সময় এটা জায়েয থাকলেও পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যার প্রমাণ হিসেবে একাধিক সহীহ হাদীস উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ২. এটা মুয়ায (রা.) এর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল যার অনুমোদন নবী (সা.) দেননি। সুতরাং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে শরীয়তের দলিল হিসেবে উল্লেখ করা যথার্থ নয়। আর মুয়ায (রা.) এর গোত্রের লোকেরা এই বিষয়ে কোন আপত্তি না করে নিরব ছিলেন এর কারণ তারা মনে করেছেন তিনি নবী (সা.) এর অনুমতিক্রমেই এমন করেছেন। সুতরাং এই হাদীস দিয়ে নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায় করার দলিল গ্ৰহণযোগ্য নয়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- নুর আহমাদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply