প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, টিভির ইমামকে অনুসরণ করে নামায পড়া যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মুক্তাদীর নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো ইমাম ও মুক্তাদী এক স্থানে অবস্থান করা এবং উভয়ের স্থান ভিন্ন না হওয়া। যদি ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে যেমন: রাস্তা, নদী, খাল অথবা কাতার করারমত খালি জায়গা তাহলে মুক্তাদীর নামায সহীহ হবে না। সুতরাং টিভিতে নামায সরাসরি সম্প্রচারিত হলেও সেই ইমামকে অনুসরণ করে নামায আদায় করলে মুক্তাদীর নামায সহীহ হবে না৷ কারণ এখানে ইমাম ও মুক্তাদীর স্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং উভয়ের মাঝে অনেক দূরত্ব রয়েছে। এমনিভাবে মসজিদের মাইকে প্রচার করা হলেও বাসা-বাড়ী থেকে ইমামকে অনুসরণ করে নামায আদায় করলে মুক্তাদীর নামায সহীহ হবে না।
وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ
১.আল্লাহ তা’আলা বলেন,তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। অর্থাৎ মসজিদে এসে জামাতের সাথে নামায আদায় করো। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ৪৩ তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৮৮)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ
২.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা (নামাযের) কাতার-সমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে এবং তোমরা একে অন্যের ঘাড় বরাবর করে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আমি দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি জায়গাতে শয়তান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৬৭ হাদীসের মান: সহীহ)
অবশ্য কাতারের মধ্যে দেয়াল বা বেড়া থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لَهُ حَصِيرٌ يَبْسُطُهُ بِالنَّهَارِ، وَيَحْتَجِرُهُ بِاللَّيْلِ، فَثَابَ إِلَيْهِ نَاسٌ، فَصَلَّوْا وَرَاءَهُ
৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (সা.) এর একটি চাটাই ছিল। তিনি দিনের বেলায় তা বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। আর সাহাবীগণ তার পেছনে কাতার বন্দী হয়ে নামায আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৩০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৭০০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيِّ، حَدَّثَنِي رَجُلٌ، أَنَّهُ كَانَ مَعَ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ بِالْمَدَائِنِ فَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَتَقَدَّمَ عَمَّارٌ وَقَامَ عَلَى دُكَّانٍ يُصَلِّي وَالنَّاسُ أَسْفَلَ مِنْهُ فَتَقَدَّمَ حُذَيْفَةُ فَأَخَذَ عَلَى يَدَيْهِ فَاتَّبَعَهُ عَمَّارٌ حَتَّى أَنْزَلَهُ حُذَيْفَةُ فَلَمَّا فَرَغَ عَمَّارٌ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ أَلَمْ تَسْمَعْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” إِذَا أَمَّ الرَّجُلُ الْقَوْمَ فَلاَ يَقُمْ فِي مَكَانٍ أَرْفَعَ مِنْ مَقَامِهِمْ ” . أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ قَالَ عَمَّارٌ لِذَلِكَ اتَّبَعْتُكَ حِينَ أَخَذْتَ عَلَى يَدَىَّ
৪.অর্থ: আদী ইবনে সাবিত আল-আনসারী (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। আমার কাছে এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করেছেন যিনি মাদায়েনে আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রা.) এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, নামাযের ইকামত দেওয়া হলে আম্মার (রা.) সামনে গেলেন এবং ইমামতি করার জন্য একটি দোকানের উপর (উঁচু স্থানে) দাঁড়ালেন। তখন মুক্তাদীরা তার থেকে নিঁচু স্থানে ছিল। হুযায়ফা (রা.) সামনে এগিয়ে গিয়ে আম্মার (রা.) এর হাত ধরে তাকে নীচে নামিয়ে আনেন। আম্মার (রা.) নামায শেষ করলে হুযায়ফা (রা.) তাকে বলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলতে শুনেননিঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে, সে যেন সমাগত মুসল্লী হতে কোন উঁচু স্থানে না দাঁড়ায় ? তখন আম্মার (রা.) বলেন, ঐ সময় হাদীসটি আমার স্মরণে আসায় আমি আপনার হস্ত ধারণের অনুসরণ করে নীচে নেমে আসি। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫৯৮ হাদীসের মান: হাসান)
মোটকথা জামাতে নামায আদায় করতে হলে মসজিদে যেতে হবে ৷ অথবা যে স্থানে নামায পড়া হবে সেখানে কাউকে ইমাম নিযুক্ত করে সেই ইমামের অনুসরণ করে নামায আদায় করতে হবে৷ আর উভয়ের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। যদি দুই কাতারের মাঝখানে আরো এক কাতার পরিমাণ জায়গা ফাঁকা থাকে। তাহলে নামায হয়ে যাবে কিন্তু নামায মাকরূহ হবে। তবে যদি দুই কাতারের মাঝখানে এতো বেশি পরিমাণ জায়গা খালি থাকে যেখানে দুই কাতার হয়ে যায়। তাহলে খালি জায়গার পরে যারা নামায আদায় করবে তাদের নামায হবে না। তাদেরকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু: ২/১২৪৮-১২৪৯)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- তোফায়েল আহমদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply