প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে, জামাতের নামাযে মহিলাদের কাতারে দাঁড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
বর্তমানে ফেতনা ফাসাদের আধিক্যতার দরুন মহিলাদের যে কোন নামাযে মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়া মাকরূহ। তবে বাড়িতে মাহরাম পুরুষের পিছনে শরীক হওয়া মাকরূহ বিহীনভাবে জায়েয। উল্লেখিত কথা বিবেচনা করে নিচে মাহরাম পুরুষের পিছনে মহিলাদের নামাযের কাতারে দাঁড়ানোর সঠিক নিয়ম বর্ণনা করা হলো।
১.নারী পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবে না। সর্বদা সামনের কাতারে পুরুষেরা দাঁড়াবে আর পিছনের কাতারে মহিলারা দাঁড়াবে। সুতরাং একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হলে, পুরুষ সামনে দাঁড়াবে আর মহিলা পিছনে দাঁড়াবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোত্তম হলো প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হলো শেষ কাতার। আর নারীদের কাতারের মধ্যে সর্বোত্তম হলো শেষের কাতার (যা পুরুষের কাতার হতে দূরে থাকে) এবং নিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার। (যদি পুরুষদের কাতারের নিকটবর্তী হয়)। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৬৯ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)
২.দুইজন পুরুষ আর একজন মহিলা হলে, একজন পুরুষ ইমাম হবে এবং ইমামের ডানে পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবে আর মহিলা পিছনে একাকী দাঁড়াবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى بِهِ وَبِأُمِّهِ أَوْ خَالَتِهِ . قَالَ فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ وَأَقَامَ الْمَرْأَةَ خَلْفَنَا
অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে নামায আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং মহিলাকে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৭৭ হাদীসের মান: সহীহ)
مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ صَلَّيْتُ إِلَى جَنْبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَعَائِشَةُ خَلْفَنَا تُصَلِّي مَعَنَا وَأَنَا إِلَى جَنْبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أُصَلِّي مَعَهُ
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছি। তখন আয়েশা (রা.) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে নামায আদায় করেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে নামায আদায় করি। (ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮০৪ হাদীসের মান: সহীহ)
৩.দুইজন পুরুষ আর দুইজন মহিলা হলে, একজন পুরুষ ইমাম হবে এবং ইমামের ডানে পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবে আর মহিলা দুইজন পিছনে দাঁড়াবে।
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ فَأَتَوْهُ بِسَمْنٍ وَتَمْرٍ فَقَالَ ” رُدُّوا هَذَا فِي وِعَائِهِ وَهَذَا فِي سِقَائِهِ فَإِنِّي صَائِمٌ ” . ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ تَطَوُّعًا فَقَامَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ وَأُمُّ حَرَامٍ خَلْفَنَا . قَالَ ثَابِتٌ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ عَلَى بِسَاطٍ
অর্থ: আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) উম্মে হারাম (রা.) এর নিকট আগমন করেন। তখন তারা তাঁর সম্মুখে খাওয়ার জন্য ঘি ও খেজুর হাযির করেন। নবী (ﷺ) বলেন, তোমরা ঘি ও খেজুর স্ব-স্ব পাত্রে রাখ, কেননা আমি রোযাদার। অতঃপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে দুই রাকাত নফল, নামায আদায় করেন। তখন উম্মে সুলায়ম (রা.) ও উম্মে হারাম (রা.) আমাদের পেছনে দাঁড়ান। বর্ণনাকারী ছাবেত বলেন, যথা সম্ভব আমার মনে পড়ে তিনি (আনাস) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর ডান পাশে একই বিছানায় আমাকে দাঁড় করান। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬০৮ হাদীসের মান: সহীহ)
৪.তিনজন পুরুষ আর একজন মহিলা হলে, একজন পুরুষ ইমাম হবে এবং ইমামের পিছনে দুইজন পুরুষ দাঁড়াবে। আর সকলের পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ صَلَّيْتُ أَنَا وَيَتِيمٌ، فِي بَيْتِنَا خَلْفَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأُمِّي أُمُّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا
অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি এতিম ছেলে নবী (সা.) এর পিছনে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মে সুলাইম (রা.) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২৭ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৭৪ হাদীসের মান: সহীহ)
এক কথায় জামাতের নামাযে মাহরাম মহিলারা সর্বদাই পিছনের কাতারে দাঁড়াবে। আর গায়রে মাহরাম মহিলারা যদি জামাতে শরীক হতে চায় তাহলে পর্দার আড়ালে থেকে শরীক হতে হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মাহদী হাসান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply