কখন নামাযের মধ্যে মুকাব্বির বানানো জায়েয ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ! প্রিয় মুফতী সাহেব আশাকরি ভালো আছেন। আমার প্রশ্ন হলো,কখন নামাযের মধ্যে মুকাব্বির বানানো জায়েয ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

জামাত বড় হলে অথবা ইমামের আওয়াজ সকল নামাযী পর্যন্ত না পৌঁছলে, মুক্তাদীর উচ্চস্বরে তাকবীর বলা তথা মুকাব্বির হওয়া জায়েয আছে। অথবা নামাযের মধ্যে যদি বিদ্যুৎ চলে যায় আর ইমামের আওয়াজ মুক্তাদীদের পর্যন্ত না পৌঁছে তাহলে সেই মুহুর্তেও মুকাব্বির হওয়া জায়েজ আছে। একদা রসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে যায়। ফলে আবু বকর (রা.) রাসূল (সা.) এর তাকবীর শুনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলেছিলেন। আর তিনিই ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মুকাব্বির। সুতরাং প্রয়োজনে নামাযের মধ্যে মুকাব্বির বানানো যাবে এতে কোন অসুবিধা নেই।

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا مَرِضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَضَهُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ أَتَاهُ بِلاَلٌ يُؤْذِنُهُ بِالصَّلاَةِ فَقَالَ ” مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. قُلْتُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ أَسِيفٌ، إِنْ يَقُمْ مَقَامَكَ يَبْكِي فَلاَ يَقْدِرُ عَلَى الْقِرَاءَةِ. قَالَ ” مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. فَقُلْتُ مِثْلَهُ فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ ” إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ، مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. فَصَلَّى وَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَخُطُّ بِرِجْلَيْهِ الأَرْضَ، فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ أَنْ صَلِّ، فَتَأَخَّرَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ وَقَعَدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى جَنْبِهِ، وَأَبُو بَكْرٍ يُسْمِعُ النَّاسَ التَّكْبِيرَ

অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার বিলাল (রা.) তাঁর নিকট এসে নামাযের (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। নবী (ﷺ) বললেন, আবু বকরকে বল, যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। (আয়েশা (রা.) বললেন), আমি বললাম, আবু বকর (রা.) কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেন, আবু বকরকে বল, নামায আদায় করতে। আমি আবারও সে কথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বললেন, তোমরা তো ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সাথী রমণীদেরই মত। আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে।

আবু বকর (রা.) লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে নবী (ﷺ) দু’জনের কাঁধে ভর করে বের হলেন। [আয়েশা (রা.)] বললেন আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি দু’পা মুবারাক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবু বকর (রা.) তাঁকে দেখতে পেয়ে পেছনে সরে আসতে লাগলেন। নবী (ﷺ) ইশারায় তাঁকে নামায আদায় করতে বললেন, (তবুও) আবু বকর (রা.) পেছনে সরে আসলেন। নবী (ﷺ) তাঁর পাশে বসলেন, আর আবু বকর (রা.) তাকবীর শুনাতে লাগলেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭১২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮২৭ হাদীসের মান: সহীহ)

সারকথা হলো যদি ইমাম সাহেবের অসুস্থতার কারণে অথবা গলার সমস্যার কারণে আওয়াজ কম হয়। কিংবা মসজিদে লোক সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে মুসল্লিরা ইমাম সাহেবের আওয়াজ শুনতে না পায়। তখন ইমাম সাহেবের পিছনে একজন মুকাব্বির হবে এবং সে ইমাম সাহেবের সাথে সাথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে। যাতে করে সকল মুসল্লী তাকবীরের শব্দ শুনে ইমাম সাহেবের সাথে যথাযথভাবে রুকু সিজদা ইত্যাদি রুকন আদায় করতে পারে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- ওমর ফারুক।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *