প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! সামনের কাতার পূর্ণ থাকলে একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
জামাত চলাকালীন কেউ যদি এসে কাতার পূর্ণ হওয়া দেখে, তাহলে সে একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়াবে না। কারণ একাকী পিছনে দাঁড়ানো মাকরূহ। বরং একাকীত্ব দূর করার জন্য ডানে বামে দেখে আরেকজন সঙ্গী পাওয়ার চেষ্টা করবে। যদি কোন সঙ্গী পাওয়া না যায় তাহলে সামনের কাতারের মাঝ থেকে একজনকে টেনে নিয়ে দাঁড়াবে। আর যাকে টেনে আনা হবে তার নামাযরত অবস্থায় হেঁটে পিছনের দিকে আসার দ্বারা নামাযের কোন অসুবিধা হবে না। কারণ নামাযের মধ্যে প্রয়োজনে হেঁটে পিছনে আসা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যদি এ মাসয়ালা জানা লোক সামনের কাতারে না থাকে। তাহলে নিরুপায় হয়ে সে পিছনে একাকী নামায আদায় করবে। এতে অপারগতার কারণে তার নামায মাকরুহ হবে না।
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
১.অর্থ: “আল্লাহ তাআলা সাধ্যের বাহিরে কারও উপর কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না”। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৮৬)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جِئْتُ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي الْبَيْتِ وَالْبَابُ عَلَيْهِ مُغْلَقٌ فَمَشَى حَتَّى فَتَحَ لِي ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مَكَانِهِ . وَوَصَفَتِ الْبَابَ فِي الْقِبْلَةِ
২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সা.) ঘরে দরজা বন্ধ করে নামায আদায় করছিলেন। এমন অবস্থায় আমি এসে দরজা খুলতে বললে তিনি (নামাযরত অবস্থায়) হেঁটে গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দিলেন। তারপর তিনি নামাযের জায়গায় হেঁটে ফিরে এলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, দরজাটি ছিল কিবলার দিকে। (ইফা.সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৬০১ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৯২২ হাদীসের মান: হাসান)
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الْوَلِيدِ بْنِ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ أَتَيْنَا جَابِرًا – يَعْنِي ابْنَ عَبْدِ اللَّهِ – قَالَ سِرْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ فَقَامَ يُصَلِّي وَكَانَتْ عَلَىَّ بُرْدَةٌ ذَهَبْتُ أُخَالِفُ بَيْنَ طَرَفَيْهَا فَلَمْ تَبْلُغْ لِي وَكَانَتْ لَهَا ذَبَاذِبُ فَنَكَسْتُهَا ثُمَّ خَالَفْتُ بَيْنَ طَرَفَيْهَا ثُمَّ تَوَاقَصْتُ عَلَيْهَا لاَ تَسْقُطُ ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ
৩.অর্থ: উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমরা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেন,আমি রাসূল (সা.) এর সাথে কোন এক যুদ্ধে যাই। তিনি নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এ সময় আমার গায়ে একটি ছোট চাঁদর ছিল। আমি তা আমার কাঁধের দুই পাশে রাখার জন্য চেষ্টা করি, কিন্তু তা ছোট থাকায় কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছেনি। আমার চাঁদরের লম্বা আচল ছিল, আমি সামান্য নত হয়ে ঐ আচলদ্বয় (কাঁধের) উপর এমনভাবে বেঁধে দেই, যাতে তা সরে না পড়তে পারে। অতঃপর এ অবস্থায় আমি রসূলুল্লাহ (সা.) এর বাম পাশে গিয়ে নামাযে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে দাঁড় করান। পরে ইবনে সাখর এসে তার বাম পাশে দাঁড়ান। অতঃপর তিনি নিজের দুই হাতে আমাদের উভয়ের হাত ধরে তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৩৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭২৪০ হাদীসের মান: সহীহ)
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ عَلَيْهِ فَكَبَّرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ وَرَاءَهُ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ ثُمَّ رَفَعَ فَنَزَلَ الْقَهْقَرَى حَتَّى سَجَدَ فِي أَصْلِ الْمِنْبَرِ ثُمَّ عَادَ حَتَّى فَرَغَ مِنْ آخِرِ صَلاَتِهِ
৪.অর্থ: সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন,আমি দেখলাম রসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের উপর দাঁড়ালেন এবং (নামাযের) তাকবীর বললেন, লোকেরাও তার পিছনে তাকবীর বলল। তিনি মিম্বরের উপরেই ছিলেন, অতঃপর তিনি রুকু হতে উঠে পিছনের দিকে হেঁটে মিম্বার থেকে নিচে নেমে গেলেন। আর মিম্বারের গোঁড়ায় সিজদা করলেন। আবার তিনি পূর্বস্থানে চলে গেলেন। এভাবে তিনি তার নামায সমাপ্ত করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৭১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৯৯ হাদীসের মান: সহীহ)
أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ الْمُسْلِمِينَ، بَيْنَا هُمْ فِي الْفَجْرِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ، وَأَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ يُصَلِّي بِهِمْ فَفَجَأَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَدْ كَشَفَ سِتْرَ حُجْرَةِ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ فَنَظَرَ إِلَيْهِمْ، وَهُمْ صُفُوفٌ، فَتَبَسَّمَ يَضْحَكُ، فَنَكَصَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى عَقِبَيْهِ
৫.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত: মুসলমানগণ সোমবার ফজরের নামাযে ছিলেন, আবু বকর (রা.) তাদের নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। নবী (সা.) আয়েশা (রা.) এর হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে তাকালেন। তখন তারা সারিবদ্ধ ছিলেন, তা দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। তখন আবু বকর (রা.) তার গোড়ালির উপর ভর দিয়ে পিছনে সরে আসলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৩২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮২৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ وَابِصَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى رَجُلاً يُصَلِّي خَلْفَ الصَّفِّ وَحْدَهُ فَأَمَرَهُ أَنْ يُعِيدَ
৬.অর্থ: ওয়াবিসা (রা.) থেকে বর্ণিত: একদা রসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যাক্তিকে কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে দেখে তাকে পুনরায় নামায আদায় করার নির্দেশ দিলেন। (ইফা.সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৮২ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৩১ হাদীসের মান: সহীহ)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানীফা, মালেক
ও শাফিঈ (রহ.) এর মতে একাকী নামায আদায় করা জায়েয আছে। কিন্তু এভাবে একা দাঁড়িয়ে নামায পড়া মাকরূহ। তাদের মতে পুনরায় নামাযের নির্দেশ মুস্তাহাব পর্যায়ের। সুতরাং উল্লেখিত হাদীসগুলোর আলোকে বলা যায় যে,সামনের কাতার পূর্ণ থাকলে এবং মাসয়ালা জানা লোক না থাকলে একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যাবে। অন্যথায় একা নামায আদায় করলে মাকরূহ হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply