প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! অযুতে কাপড়ের মোজার উপর কি মাসাহ করা যাবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
যে কাপড়ের মোজায় চামড়া লাগানো থাকে অথবা যা চামড়ার মত শক্ত মোটা কাপড়ের তৈরি হয়। আর টাখনুর উপর পর্যন্ত পা আবৃত করে রাখে এবং জুতা ব্যতীত শুধু মোজা পড়ে হাঁটা যায়। তাহলে এমন মোজা ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মতে চামড়ার মোজার স্থলাভিষিক্ত এবং তার উপর মাসাহ করা জায়েয।
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ وَضَّأْتُ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم فَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ وَصَلَّى
অর্থ: মুগীরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে অযু করিয়েছি। তিনি (অযুর সময়) উভয় চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন এবং নামায আদায় করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৮১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫২৫ হাদীসের মান: সহীহ)
কিন্তু জাওরাব বা সুতি মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়, কেননা এর পক্ষে কোন সহীহ দলিল নেই। তাই কেউ সুতি মোজার উপর মাসাহ করলে তার অযু ও নামায হবে না। যারা বলে “যে কোন পবিত্র মোজার উপর মাসাহ করা যাবে”। তারা নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে যেসব হাদীস দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেসব হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন।
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ
১.মুগীরা ইবনে শুবা (রা) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (সা.) অযু করলেন এবং জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করলেন। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৯৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫৫৯ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৫৯ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১২৫ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৮২০৬)
তাহকীক: হাদীসটি যঈফ। ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, বর্ণনাটি মুনকার। সুফিয়ান সাওরী, আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল,ইবনুল মাদীনী এবং ইমাম মুসলিমসহ প্রমুখ বিশিষ্ট ইমামগণ এই হাদীসকে যঈফ বলেছেন। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এ বর্ণনা যঈফ হওয়ার বিষয়ে হাদীসের ইমামগণ একমত। তাই এ ক্ষেত্রে তিরমিযী (রহ.) এর বক্তব্য ‘হাসান সহীহ’ গ্ৰহণযোগ্য নয়। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী এ হাদীস বর্ণনা করতেন না। কেননা মুগীরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে মারূফ (প্রকৃত ও নির্ভুল) বর্ণানা হলো, নবী (সা.) চামড়ার মোজায় মাসাহ করেছেন। জাওরাবের (সুতি মোজার) উপর মাসাহ করার কথা সেখানে নেই। মুবারকপুরী (রহ.) বলেন, হাদীসের অনেক ইমাম এই বর্ণনাকে যঈফ বলেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী: ১/২৭৯)
عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ .
২.আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সা.) অযু করেন এবং জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫৬০)
তাহকীক: হাদীসটি যঈফ। এই হাদীসটি মুহাদ্দিসীনদের মতে যঈফ, কেননা এর সনদে দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, এই বর্ণনায় দু’টি ত্রুটি রয়েছে। ক. রাবীর দুর্বলতা। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আবু যুরআ, নাসাঈ প্রমুখ ইমামগণ ঈসা ইবনে সিনানকে যঈফ বলেছেন। খ. সনদের বিচ্ছিন্নতা। কেননা আবু মুসা আশআরী থেকে যাহহাক ইবনে আব্দুর রহমান হাদীস শুনেছেন এটা প্রমাণিত নয়। (তানকীহুল তাহকীক ১/৩৪৬)
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً فَأَصَابَهُمُ الْبَرْدُ فَلَمَّا قَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَهُمْ أَنْ يَمْسَحُوا عَلَى الْعَصَائِبِ وَالتَّسَاخِينِ
৩.সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত: একদা রসূলুল্লাহ (সা.) শত্রুদের মোকাবেলার জন্য একদল সৈন্য পাঠান। তারা (যাত্রা পথে) ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। অতঃপর তারা রসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট ফিরে এলে তিনি তাদেরকে পাগড়ি ও মোজার উপর মাসাহ করার অনুমতি প্রদান করেন। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৪৬)
তাহকীক: হাদীসটি যঈফ। ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির সনদ মুনকাতি তথা বিচ্ছিন্ন। ইবনে আবী হাতিম ‘মারাসীল’গ্ৰন্থে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, “রাশেদ ইবনে সা’দ সাওবান (রা.) থেকে শুনেছেন তা প্রমাণিত নয়। ‘বুলূগুল মারাম’ কিতাবে আছে, এই হাদীস বর্ণনা করার পর রাবী নিজেই বলে দিয়েছেন, এখানে تسَاخِينِ অর্থ চামড়ার মোজা। সুতরাং কাপড়ের মোজা অর্থ করা সঠিক নয়। (তালখীসুল হাবীর ১/১৩১)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হলো, মোজার উপর মাসাহ করার জন্য চামড়ার মোজা বা শক্ত মোটা কাপড়ের মোজা হতে হবে। আমাদের দেশের প্রচলিত পাতলা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করা কিছুতেই জায়েয হবে না। যারা বলে সব ধরনের কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করা যাবে তাদের কথা সহীহ নয়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মিজানুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply