প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! মোজার উপর মাসাহ করার শর্তগুলো কি কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতা বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সহীহ হাদীস রয়েছে। কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। সেই শর্তগুলো পাওয়া গেলেই কেবল মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে। অন্যথায় নাজায়েয বলে গণ্য হবে। মোজার উপর মাসাহ করার প্রধানত চারটি শর্ত।
১.নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোজার উপর মাসাহ করতে হবে। অর্থাৎ মুসাফির ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত এবং মুকীম (বাড়িতে অবস্থানকারী) এক দিন এক রাত পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহ করতে পারবে। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্যও মোজা খুলে ফেললে এ হুকুম বাতিল হয়ে যাবে।
عَنْ عَلِيٍّ، – رضى الله عنه – قَالَ جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِلْمُسَافِرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ وَيَوْمًا وَلَيْلَةً لِلْمُقِيمِ يَعْنِي فِي الْمَسْحِ
অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১২৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
২.প্রথমবার দুই পা ধুয়ে পরিপূর্ণ অযু করে মোজা পরিধান করতে হবে। সুতরাং কেউ অযু করার পূর্বে মোজা পরিধান করলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। কেননা এ সময় সে পবিত্র অবস্থায় তার পায়ে মোজা পরিধান করেনি।
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ، فَأَهْوَيْتُ لأَنْزِعَ خُفَّيْهِ فَقَالَ دَعْهُمَا، فَإِنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ . فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا
অর্থ: মুগীরা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) এর সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। (অযু করার সময়) আমি তার মোজা দু’টি খুলতে চাইলে তিনি বললেন, এ দু’টি এভাবেই থাক। কারণ আমি পবিত্র অবস্থায় ও দু’টি পরেছিলাম। (এই বলে) তিনি তার উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫২৪ হাদীসের মান: সহীহ)
৩.যেই সমস্ত কারণে কেবল অযু করতে হয় তখন শুধু মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। তাই কারো গোসল ফরয হলে সে মোজার উপর মাসাহ করলে জায়েয হবে না। বরং তার জন্য মোজা খুলে পা ধোয়া জরুরী।
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفْرًا أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ
অর্থ: সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমরা যখন সফরে থাকতাম রসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিতেন, আমরা যেন ফরয গোসল ছাড়া তিন দিন তিন রাত আমাদের চামড়ার মোজা না খুলি। এমনকি পেশাব-পায়খানা ও ঘুম হতে ওঠার পর অযু করার সময়ও (মোজা না খুলি)। (ইফা.সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৯৬ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১২৭ হাদীসের মান: হাসান)
৪.মোজা চামড়ার হতে হবে অথবা এমন কাপড়ের মোজা হতে হবে। যাতে চামড়া লাগানো থাকে কিংবা চামড়ার মত শক্ত মোটা কাপড়ের তৈরি হয়। আর টাখনুর উপর পর্যন্ত পা আবৃত করে রাখে এবং জুতা ব্যতীত শুধু মোজা পড়ে হাঁটা যায়। তাহলে এমন মোজার উপর মাসাহ করা যাবে।
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ وَضَّأْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ وَصَلَّى
অর্থ: মুগীরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে অযু করিয়েছি। তিনি (অযুর সময়) উভয় চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন এবং নামায আদায় করলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৮১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫২৫ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখিত হাদীস-সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো কয়েকটি শর্ত পূরণ করলে মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। যদি ঐ শর্তগুলো পূরণ না হয় তাহলে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। সুতরাং প্রতিটি মুমিন মুসলমানের মোজা ব্যবহারের সময় এই শর্তগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরী।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মাহমুদুল হাসান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply