ছেলেরা হাতে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে কি?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো ছেলেরা চুল দাড়ি ব্যতীত শরীরের অন্য স্থানে যেমন হাতে সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে কি?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

ছেলেদের জন্য চুল দাড়ি ব্যতীত শরীরে অন্য
কোনো স্থানে সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা নাজায়েয। চাই বিবাহ-শাদী উপলক্ষ্যে হোক অথবা অন্য কোন উপলক্ষ্যে হোক। এমনকি নাবালেগ ছেলেদের হাতে- পায়েও মেহেদি লাগানো নাজায়েয। কারণ হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো মেয়েদের সাজ। মেয়েদের সাজ গ্রহণ করা বালেগ ছেলেদের জন্য যেমন নিষেধ, তেমনিভাবে নাবালেগ ছেলেদের জন্যও নিষেধ। তাই নাবালেগ ছেলেদেরকেও মেহেদি লাগিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে অসুস্থতার চিকিৎসার প্রয়োজনে ছেলেদের দেহের যে কোন জায়গায় মেহেদি লাগানো জায়েয আছে ৷

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُتِيَ بِمُخَنَّثٍ قَدْ خَضَبَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ بِالْحِنَّاءِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” مَا بَالُ هَذَا ” . فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ يَتَشَبَّهُ بِالنِّسَاءِ . فَأُمِرَ بِهِ فَنُفِيَ إِلَى النَّقِيعِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ نَقْتُلُهُ فَقَالَ ” إِنِّي نُهِيتُ عَنْ قَتْلِ الْمُصَلِّينَ ”

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) এর কাছে একজন হিজড়া আসে, যার দুই হাত ও পা মেহেদি দ্বারা রঞ্জিত ছিল। তখন নবী (ﷺ) জিজ্ঞাসা করেন, এর এ অবস্থা কেন? জবাবে সাহাবীগণ বলেন,হে আল্লাহর রাসূল! সে নারীর বেশ ধরেছে। তখন তাকে শহর থেকে বের করে দেয়ার হুকুম হলে, তাকে নাকী নামক স্থানে নির্বাসনে বের করে দেয়া হয়। এ সময় সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করবো না? তিনি বলেনঃ আমাকে নামাযীদের হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৪৯২৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” طِيبُ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهُ وَخَفِيَ لَوْنُهُ وَطِيبُ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهُ وَخَفِيَ رِيحُهُ ”

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, পুরুষদের প্রসাধনী হল যে বস্তুর গন্ধ প্রকাশ পায় কিন্তু রং অপ্রকাশিত থাকে আর মেয়েদের প্রসাধনী হল যে বস্তুর রং প্রকাশ পায় কিন্তু গন্ধ অপ্রকাশিত থাকে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৮৭ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: «لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»

৩.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঐ সব পুরুষকে অভিশাপ করেছেন। যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ঐসব নারীকে অভিশাপ করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي رِمْثَةَ، قَالَ انْطَلَقْتُ مَعَ أَبِي نَحْوَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا هُوَ ذُو وَفْرَةٍ بِهَا رَدْعُ حِنَّاءَ وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ

৪.অর্থ: আবু রিমসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতার সাথে নবী (ﷺ) এর নিকট গিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর চুল কান পর্যন্ত লম্বা এবং তা মেহেদির রঙে রঞ্জিত ছিলো এবং তাঁর পরিধানে ছিলো দু’টি সবুজ রঙের চাদর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২০৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّ أَحْسَنَ مَا غُيِّرَ بِهِ الشَّيْبُ الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ

৫.অর্থ.আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী (ﷺ) বলেছেন, বার্ধক্যের চিহ্ন পরিবর্তনের
জন্য সর্বোত্তম হলো মেহেদি ও কাতম ঘাস। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১৭৫৩ হাদীসের মান সহীহ)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ ”

৬.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন যখন আবু কুহাফা (রা.) আসেন, তখন তার মাথার চুল ও দাড়ি ছাগামা (এক প্রকার সাদা ঘাস) এর মত সাদা ছিল। তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ একে কাল রং ব্যতীত অন্য যে কোন রংয়ে রঞ্জিত কর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২০৪ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَلِيِّ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ جَدَّتِهِ، سَلْمَى وَكَانَتْ تَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ مَا كَانَ يَكُونُ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُرْحَةٌ وَلاَ نَكْبَةٌ إِلاَّ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَضَعَ عَلَيْهَا الْحِنَّاءَ

৭.অর্থ: আলী ইবনে উবাইদুল্লাহ তার পিতামহী সালামা উম্মে রাফি‘ (রা.) থেকে বর্ণিত, সালামা (রা.) নবী (ﷺ) এর খেদমত করতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখনই তলোয়ারের বা কাঁটা ইত্যাদি দ্বারা যখমী হয়েছেন আমাকে তাতে মেহেদি লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০৫৪ হাদীসের মান: সহীহ)

মোটকথা শরীয়ত সম্মত কোন ওজর ছাড়া পুরুষের জন্য চুল দাড়ি ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মেহেদি ব্যবহার করা জায়েয নেই। সুতরাং বিয়ে-শাদী, ঈদ
বা কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ছেলেদের মেহেদি ব্যবহার করা জায়েয হবে না। যদিও সেই ছেলেটি নাবালেগ হোক না কেন। তবে অসুস্থতার কারণে শরীরের যে কোন অঙ্গেই মেহেদি ব্যবহার করা জায়েয আছে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *