প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। শাইখ মাগরিবের নামায মোট পাঁচ রাকাত না সাত রাকাত দলিলসহ জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মাগরিবের নামায মোট ৭ রাকাত। প্রথমে ৩ রাকাত ফরয, অতঃপর ২ রাকাত সুন্নত, এরপর ২ রাকাত নফল। এর মাঝে ফরযের পরে দুই রাকাত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যা প্রত্যেকের জন্য আদায় করা জরুরী এবং পরিত্যাগ করা গোনাহের কাজ। আর সর্বশেষ দুই রাকাত হলো নফল। যা আদায়ে সওয়াব রয়েছে কিন্তু পরিত্যাগ করলে গোনাহ নেই। কেউ চাইলে এই দুই রাকাত পড়তেও পারে আবার ছেড়েও দিতে পারে। তবে নফলের দ্বারা যেহেতু ফরযের ঘাটতি পূরণ হয় তাই সময় সুযোগ থাকলে নফলও পড়া উচিত।
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّأَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَاهُ قَالَ جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ لَيْسَ بَيْنَهُمَا سَجْدَةٌ وَصَلَّى الْمَغْرِبَ ثَلاَثَ رَكَعَاتٍ وَصَلَّى الْعِشَاءَ رَكْعَتَيْنِ
১.অর্থ: উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার নামায একত্রে আদায় করেছেন। তিনি এই দুই নামাযের মধ্যে অন্য কোন নামায আদায় করেননি। তিনি মাগরিব তিন রাকাত এবং ইশা দুই রাকাত আদায় করেছেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৯৮১ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: আরাফা ও মুযদালিফা ব্যতীত অন্যত্র দুই ফরয নামায একত্রে আদায় করা নিষেধ। কারণ প্রতিটি নামাযের নির্ধারিত সময় রয়েছে। সুতরাং সেই সময়ের মধ্যেই উক্ত নামায আদায় করা জরুরী।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ
২.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে তাঁর ঘরে মাগরিবের পর দুই রাকাত (সুন্নত) আদায় করেছি। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭৩০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: …فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ المَغْرِبَ فَصَلَّى حَتَّى صَلَّى العِشَاءَ
৩.অর্থ: হুযায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন… আমি নবী (ﷺ) এর নিকট হাযির হয়ে তার সাথে মাগরিবের নামায আদায় (শেষ) করলাম। তারপর তিনি (দুই রাকাত) নফল নামায আদায় করলেন, অবশেষে তিনি ইশার নামায আদায় করলেন। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩৭৮১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، فِي هَذِهِ الآيَةِ ( تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ، يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ) قَالَ : كَانُوا يَتَيَقَّظُونَ مَا بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ يُصَلُّونَ
৪.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি এই আয়াত সম্পর্কেঃ “তারা তাদের পৃষ্ঠদেশকে বিছানা হতে আল্লাহর ভয় ও আশায় দূরে রাখে এবং তাদের জন্য প্রদত্ত রিযিক হতে তারা আল্লাহর রাস্তার খরচ করে” বলেন যে, সাহাবীগণ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে (নফল) নামায আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১২২১ হাদীসের মান: সহীহ)
উক্ত আলোচনার দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হলো যে, মাগরিবের নামায মোট সাত রাকাত পড়া উত্তম।
এই সাত রাকাতের মধ্যে তিন রাকাত ফরয এবং দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর দুই রাকাত হলো নফল। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দেয় তাহলে সে গোনাহগার হবে। আর নফল প্রত্যেকের পড়ার এবং ছেড়ে দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে হলেও নফল পড়া উচিত। যাতে ফরযের ঘাটতি দেখা দিলে নফল দ্বারা পূরণ করা যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৪২৫ হাদীসের মান: সহীহ)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহাম্মদ ফুরকান আহমদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply