প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে যদি বলে তুমি আমার জন্য হারাম তাহলে কি তালাক হবে ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَد
কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাকের নিয়তে বলে “তুমি আমার জন্য হারাম” তাহলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। পুনরায় তারা ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন করে মহর ধার্য করে বিবাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু এক তালাক হয়ে গেছে তাই ভবিষ্যতে স্বামী শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কখনো স্বামী দুই তালাক দিলেই বৈবাহিক সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন নতুন করে বিবাহের মাধ্যমেও একে অপরের জন্য হালাল হবে না। তবে তালাকের নিয়তে না বললে তালাক কার্যকর হবে না। কেননা কেনায়া তথা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ত থাকা আবশ্যক। আর যদি স্ত্রী সহবাস হারাম করার নিয়ত হয় অথবা কোনো নিয়ত না থাকে। তাহলে এটি কসম হিসেবে গণ্য হবে। অতঃপর স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর কসমের কাফফারা দিতে হবে। কসমের কাফফারা হলো দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুই বেলা খাবার খাওয়াবে অথবা দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে কাপড় দিবে। যদি এভাবে কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৩৭৫)
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللّٰہُ لَکَ ۚ تَبۡتَغِیۡ مَرۡضَاتَ اَزۡوَاجِکَ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ. قَدۡ فَرَضَ اللّٰہُ لَکُمۡ تَحِلَّۃَ اَیۡمَانِکُمۡ ۚ وَاللّٰہُ مَوۡلٰىکُمۡ ۚ وَهُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ
১.অর্থ: হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি নিজ স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন ? আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তোমাদের সহায়। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাহরীম: আয়াত নং ১,২)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَهُ أَمَةٌ يَطَؤُهَا فَلَمْ تَزَلْ بِهِ عَائِشَةُ وَحَفْصَةُ حَتَّى حَرَّمَهَا عَلَى نَفْسِهِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ
২.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কাছে একটি বাদি ছিল যার সাথে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রা.) এবং হাফসা (রা.) রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই বাদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তায়ালা নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) অর্থঃ “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীম: আয়াত নং ১)। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৩৯৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي الْحَرَامِ يَمِينٌ يُكَفِّرُهَا
৩.অর্থ: সাঈদ ইবনে জুবাইর (রহ.) সূত্রে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে (লিখিতরূপে) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাঈদ) বলেছেন যে, ইবনে আব্বাস (রা.) স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম করা সম্বন্ধে বলতেন যে, তা কসম সাব্যস্ত হবে, তার কাফফারা আদায় করতে হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৪৪ হাদীসের মান: সহীহ)
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰہُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَلٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَکَفَّارَتُہٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَہۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُہُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِکَ کَفَّارَۃُ اَیۡمَانِکُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ
৪.অর্থ: আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমরা যে শপথ পরিপক্কভাবে করে থাক, সেজন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। সুতরাং তার কাফফারা হলো, দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার দেবে, যা তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে খাইয়ে থাক। অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করবে কিংবা একজন গোলাম আযাদ করবে। তবে কারও কাছে যদি (এসব জিনিসের মধ্য হতে কিছুই) না থাকে। সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ করবে (এবং তারপর তা ভেঙ্গে ফেলবে)। (সূরা মায়েদাহ: আয়াত নং ৮৯)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply