ছাত্রদের জন্য বাসে হাফ ভাড়া দেওয়া কি জায়েয আছে ?

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা যে, বাসে উঠলে হাফ ভাড়া দিয়ে থাকে এ বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান কী ? দলিলসহ জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

বাস বা অন্য যে কোনো যানবাহন হলো উক্ত যানবাহন মালিকের একটি ব্যবসা। যেখানে তাদের অনেক অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। অতএব সেই সমস্ত যানবাহনে যাতায়াত করলে নির্ধারিত সঠিক ভাড়াটা দেওয়াই আবশ্যক। জোর করে ভাড়া কম দিলে বা হাফ ভাড়া দিলে তা হবে অর্থ আত্মসাতের শামিল। যা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম এবং কবীরা গোনাহ। তবে যানবাহন মালিক যদি সরকারি রায় বা ছাত্রদের দাবি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়। তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা জায়েয আছে। কিন্তু যানবাহন মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে হাফ ভাড়া দেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। এতে করে হাফ ভাড়া প্রদানকারীরা অন্যের হক নষ্ট করার অপরাধে অভিযুক্ত হবে। (আদ-দুররুল মুখতার মা’আ রদ্দিল মুহতার: ২৯১/৯)

وَلَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ

১.অর্থ: তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৮৮)

لا تَظۡلِمُوۡنَ وَلَا تُظۡلَمُوۡنَ

২. অর্থ: তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৭৯)

عَن أبي حرَّة الرقاشِي عَن عَمه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ»

৩.অর্থ: আবু হুররা আর্ রক্কাশী (রহ.) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সাবধান! কারো উপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ২৯৪৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ

৪.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কেউ যেন কারো ক্ষতি না করে এবং পরষ্পর পরষ্পরের ক্ষতি করবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৩৪১ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৮৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ

৫.অর্থ: জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা যুলুমকে ভয় করো। কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ-লালসা থেকে সাবধান থেকো। কেননা এই লোভ-লালসাই তোমাদের পুর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। তাই তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলুব্ধ করেছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا مَا حَرُمَ ‏”‏ ‏.‏

৬.অর্থ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২১৪৪ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মোঃ শহিদুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *