প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম! আমাদের মাদরাসায় নিয়মিত ফজর নামাযের পর সূরা ইয়াসীন, যোহর নামাযের পর সূরা ফাতাহ, আসর নামাযের পর সূরা নাবা, মাগরিবের নামাযের পর সূরা ওয়াকিয়া, ইশার নামাযের পর সূরা মুলক পড়া হয়। আমার প্রশ্ন হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর বিশেষ এই পাঁচটি সূরা পড়ার বিধান কী এবং এর বিশেষ কোনো ফযীলত আছে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
কুরআন মাজীদ থেকে যে কোনো সময় যে কোনো সূরা তিলাওয়াত করা যায়। তবে কয়েকটি সূরা রাতে ও দিনে পড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
যেমন ফজরের নামাযের পর সূরা ইয়াসীন, মাগরিবের নামাযের পর সূরা ওয়াকিয়া ও ইশার নামাযের পর সূরা মুলক এর ফযীলত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু যোহর নামাযের পর সূরা ফাতাহ এবং আসর নামাযের পর সূরা নাবা পড়া সম্পর্কে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এবং বিশেষ ফযীলতের আশা না করে এমনিতেই তিলাওয়াত করে। তাহলে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তিলাওয়াতের সওয়াব পাবে। কিন্তু সুন্নত মনে করে পড়লে অথবা বিশেষ ফযীলতের আশায় পড়লে বিদ’আত হবে।
عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ قَالَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مَنْ قَرَأَ يس حِينَ يُصْبِحُ أُعْطِيَ يُسْرَ يَوْمِهِ حَتَّى يُمْسِيَ وَمَنْ قَرَأَهَا فِي صَدْرِ لَيْلِهِ أُعْطِيَ يُسْرَ لَيْلَتِهِ حَتَّى يُصْبِحَ
১.অর্থ: শাহর ইবনে হাওশাব (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তার দিনটি সহজ-সাবলীল করা হবে এবং যে ব্যক্তি রাতের প্রারম্ভে (সন্ধ্যায়) সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, সকাল পর্যন্ত তার রাতটি সহজ-সাবলীল করা হবে। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ৩৪৬২ হাদীসের মান: হাসান)
وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ قَالَ: بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ (يس) فِي صَدْرِ النَّهَارِ قضيت حَوَائِجه»
২.অর্থ: আতা ইবনে আবু রাবাহ্ (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমার নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে একথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম দিকে ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে, তার সকল প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ২১৭৭ সুনানে দারেমী হাদীস নং ৩৪৬১ হাদীসের মান: মুরসাল)
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا» . وَكَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ يَأْمُرُ بَنَاتَهُ يَقْرَأْنَ بهَا فِي كل لَيْلَة.
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াকিয়া পড়েবে। সে কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। (বর্ণনাকারী বলেন) আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা পড়তে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ২১৮১ হাদীসের মান: যয়ীফ)
ব্যাখ্যা: ফযীলতের ক্ষেত্রে সকল গ্ৰহণযোগ্য মুহাদ্দিসের মতে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায়। সুতরাং সূরা ওয়াকিয়ার হাদীসটি যেহেতু ফযীলত সম্পর্কিত, তাই কেউ চাইলে ফযীলত লাভের জন্য সূরাটি পড়তে পারবে। মাগরিব নামাযের পর অথবা রাতে যে কোনো সময়েও পড়ার সুযোগ আছে। (আল ফাতহুল মুবিন ৩২ আল আজভিবাহ ৪২)
عَن عبد الله بن مَسْعُود رَضِي الله عَنهُ قَالَ من قَرَأَ تبَارك الَّذِي بِيَدِهِ الْملك كل لَيْلَة مَنعه الله عز وَجل بهَا من عَذَاب الْقَبْر وَكُنَّا فِي عهد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم نسميها الْمَانِعَة وَإِنَّهَا فِي كتاب الله عز وَجل سُورَة من قَرَأَ بهَا فِي لَيْلَة فقد أَكثر وأطاب
৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রতি রাতে ‘তাবারাকাল্লাযী’
বিয়াদিহিল মুলক পাঠ করবে, মহান আল্লাহ কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে সূরাটিকে বহিরাগত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাকারী নামে অভিহিত করতাম। আর আল্লাহর কালামে এটি এমন একটি সূরা, যে ব্যক্তি রাতে এটি পাঠ করে নিল, সে অনেক কিছু এবং উত্তম কিছু পাঠ করে ফেলল। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ২৪৬২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ : (الم * تَنْزِيلُ ) وَ ( تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ)
৫.অর্থ: জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) আলিফ-লাম-মীম তানযীল এবং তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক সূরা দু’টি না পড়ে ঘুমাতেন না।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৯২ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ২১৫৫ হাদীসের মান: সহীহ)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-আবদুর রাযযাক।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply