রাগের সময়ে কী করলে রাগ দূর হয়ে যায় ?

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম! শায়েখ আমার প্রচণ্ড রাগ, মনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে প্রচুর রাগ হয়। রাগের সময় কী করলে রাগ দূর হয়ে যাবে মেহেরবানী করে জানাবেন।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

স্বভাবগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রাগ আছে।
কারো ভিতরে কম আবার কারো ভিতরে বেশি। সবার জন্যই অহেতুক রাগ পরিহার করা আবশ্যক। কারণ অহেতুক রাগ মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস করে দেয়। রাগের কারণে অধিকাংশ সময় পরিবার ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে সংসার ভেঙ্গে যায়, পরিবার ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়। যারা অল্পতেই রেগে যায় তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু পদ্ধতি ও ফযীলত নিচে বর্ণনা করা হলো।

যে স্থানটিতে রেগে যাওয়ার মত কিছু ঘটেছে সেখান থেকে সরে যাওয়া। যার উপরে রাগ হয়েছে তার কাছ থেকে সরে যাওয়া। তার সাথে তখনই নয় বরং খানিক পরে কথা বলা তৎক্ষণাৎ চুপ থাকা। হাতের কাছে পানি থাকলে অযু করা সম্ভব হলে গোসল করা। কারণ পানি মেজাজ শীতল করতে সহায়তা করে। দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে যাওয়া বসা থাকলে শুয়ে পড়া। কেননা বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে এবং শুয়ে থাকা ব্যক্তি বসা ব্যক্তির চেয়ে নড়াচড়া এবং শক্তি প্রয়োগের দিক থেকে দুর্বল হয়। এতে রাগের অবস্থায় কোনো গর্হিত কাজ সংগঠিত হয় না। এর সাথে সাথে আউযু বিল্লাহি মিনাশশাইত্বনির রজীম এই দোয়া পড়তে থাকা। ইনশাআল্লাহ এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে অতি রাগী মানুষও ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَالۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَاللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ۚ

১.অর্থ: যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে এবং যারা নিজের রাগকে হজম করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আল্লাহ এরূপ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত নং ১৩৪)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَنَا ” إِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ قَائِمٌ فَلْيَجْلِسْ فَإِنْ ذَهَبَ عَنْهُ الْغَضَبُ وَإِلاَّ فَلْيَضْطَجِعْ.

২.অর্থ: আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বলেনঃ যদি তোমদের কেউ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে পড়ে। যদি এতে রাগ চলে যায়, তবে ভাল; নয়তো সে যেন শুয়ে পড়ে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৮২ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ৫১১৪ হাদীসের মান: সহীহ)

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ صُرَدٍ, قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنِّي لأَعْرِفُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِي يَجِدُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

৩.অর্থ: সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি এমন একটি কালিমা জানি, যা যে কেউ পাঠ করলে তার রাগ দূর হয়ে যায়। আর তা হচ্ছে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশশাইত্বনির রজীম’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১১৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪০ হাদীসের মান: সহীহ)

عَطِيَّة بن عُرْوَة السعديّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ خُلِقَ مِنَ النَّارِ وَإِنَّمَا يُطْفَأُ النَّارُ بِالْمَاءِ فَإِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ

৪.অর্থ: আতিয়্যাহ্ ইবনে উরওয়াহ্ সাদী (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ ক্রোধ শয়তানের পক্ষ হতে, আর শয়তান আগুনের তৈরী। বস্তুতঃ আগুন পানি দ্বারা নিভানো হয়। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয় তখন সে যেন অযু করে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪৭৮৪ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ৫১১৩ হাদীসের মান: হাসান)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” عَلِّمُوا، وَيَسِّرُوا، وَلَا تُعَسِّرُوا، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ “.

৫.অর্থ: ইবন্ আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা শিক্ষা দাও, সুসংবাদ প্রদান করো এবং সহজ করো। কঠিন করো না। আর যদি রাগান্বিত হয়ে যাও, তবে চুপ থাক, যদি রাগান্বিত হও, তবে চুপ থাক, যদি রাগান্বিত হও তবে চুপ থাক। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৩৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ، دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ مَا شَاءَ

৬.অর্থ: সাহল ইবনে মু’আয (রা.) থেকে তার পিতার
সূত্রে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার রাগ প্রয়োগে ক্ষমতা থাকার সত্ত্বেও সংযত থাকে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকল সৃষ্টিকূলের  মধ্য থেকে ডেকে নিবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য থেকে তার পছন্দমত যে কোনো একজনকে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৭৭ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০২১ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ مَا مِنْ جُرْعَةٍ أَعْظَمُ أَجْرًا عِنْدَ اللَّهِ مِنْ جُرْعَةِ غَيْظٍ كَظَمَهَا عَبْدٌ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ‏”‏ ‏.‏

৭.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে তা অন্য কিছু সংবরণে নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪১৮৯ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৬১১৪ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *