মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা আসলেই কি গোনাহ হয় ?

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম! শায়েখ মাঝে মধ্যে আমার মনে মনে অনেক খারাপ চিন্তা ভাবনা আসে এতে কি আমার গোনাহ হবে ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা-ভাবনা আসলেই গোনাহ হয় না বরং যখন সে খারাপ চিন্তা ভাবনাকে বাস্তবায়ন করা হয়। কিংবা মুখে স্পষ্ট শব্দে উল্লেখ করা হয় তখন শরয়ী বিধান কার্যকর হয়। এর বিপরীতে কোন ব্যক্তি ভালো কোন কাজের দৃঢ় নিয়ত করলেও একটি সওয়াব প্রাপ্ত হয়। যদি সেই ভালো কাজ সম্পাদন করে ফেলে তাহলে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়। খারাপ চিন্তা ভাবনা মনের মধ্যে আসা মাত্রই আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করবে। আর মন থেকে এসব বাজে চিন্তা দূর করে ফেলতে দ্বীনি বইপত্র পড়বে। সাথে সাথে বুযুর্গ উলামায়ে কেরামের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখবে এবং তাদের ইসলাহী বয়ান শুনবে। আশাকরি এর দ্বারা ধীরে ধীরে মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা-ভাবনা আসা দূর হয়ে যাবে।

فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

১.অর্থ: “আর যে ব্যক্তি বাধ্য হয়ে যায় আর তার উদ্দেশ্য মজা ভোগ করা না হয় এবং প্রয়োজনের সীমা অতিক্রমও না করে, তবে তার কোনো গোনাহ নেই। নিশ্চই আল্লাহ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু”। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৭৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لأُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ يَتَكَلَّمُوا أَوْ يَعْمَلُوا بِهِ

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের মনের কল্পনাগুলো মাফ করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৭ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২২০৯ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا هَمَّ عَبْدِي بِحَسَنَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبْتُهَا لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ أَكْتُبْهَا عَلَيْهِ فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا سَيِّئَةً وَاحِدَةً

৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন কোন সৎকর্মের সংকল্প গ্রহণ করে অথচ এখনও তা সম্পাদন করেনি তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি কার্যত সম্পাদন করে তবে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি অসৎ কর্মের ইচ্ছা করে অথচ এখনো সম্পাদন করেনি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কাজে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৮ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৭৩ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ: قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً

৪.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) (হাদীসে কুদসী স্বরূপ) তার রব থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ তাআলা নেকী ও বদীসমূহ চিহ্নিত করেছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যে ইচ্ছা করল ভাল কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল, তবে আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশী সাওয়াব লিখে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যদি সে ঐ অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তবে তার জন্য আল্লাহ তাআলা মাত্র একটি পাপ লিখে দেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯১ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মোঃ জিকিরুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *