প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! নফল নামাযে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া যাবে কি ? মেহেরবানী করে দলিলসহ জানালে উপকৃত হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيم
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
দিনের বেলায় নফল নামাযে আস্তে কিরাত পড়া ওয়াজিব। কেউ ভুলে দিনের বেলায় নফল নামাযে জোরে কিরাত পড়লে তার জন্য সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। আর ইচ্ছাকৃত পড়লে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার গোনাহ হবে। পক্ষান্তরে রাতের নফল নামাযে কিরাত উচ্চস্বরে ও নিম্নস্বরে দুইভাবেই পড়া যায়। তবে উচ্চস্বরে পড়া উত্তম। যদি উচ্চস্বরে পড়ার দ্বারা কারো কষ্ট হয় তাহলে নিম্নস্বরেই পড়তে হবে।
وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا
১.অর্থ: আপনি নিজের নামাযে বেশি উঁচু স্বরে পড়বেন না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়; বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবেন। (সূরা বনী- ইসরাঈল আয়াত নং ১১০)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ : اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ : ” أَلاَ إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلاَ يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلاَ يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ ” . أَوْ قَالَ : ” فِي الصَّلاَةِ ”
২.অর্থ: আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে ইতিকাফ করাকালীন সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করতে শুনলেন। তখন তিনি পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই তার প্রতিপালকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। কাজেই তোমরা একে অন্যকে (উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করে) কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে কিরাতে বা নামাযে আওয়ায উঁচু করো না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৩৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ : كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِاللَّيْلِ يَرْفَعُ طَوْرًا وَيَخْفِضُ طَوْرًا
৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) রাতের (নফল) নামায আদায়কালে কখনও কিরাত আস্তে এবং কখনও জোরে পাঠ করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩২৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَيْسٍ، قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِاللَّيْلِ أَكَانَ يُسِرُّ بِالْقِرَاءَةِ أَمْ يَجْهَرُ فَقَالَتْ كُلُّ ذَلِكَ قَدْ كَانَ يَفْعَلُ رُبَّمَا أَسَرَّ بِالْقِرَاءَةِ وَرُبَّمَا جَهَرَ . فَقُلْتُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ فِي الأَمْرِ سَعَةً
৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আবু কাইস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেনঃ আমি আয়িশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল (ﷺ) এর রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাযে কিরাত কেমন ছিল? তিনি বললেনঃ কোন সময় তিনি কিরাআত আস্তে করতেন আবার কোন সময় জোরেও করতেন, এই সব ধরনের নমুনাই তাঁর মধ্যে পাওয়া যায়। আমি বললামঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর দ্বীনের বিষয়ে বান্দাদের জন্য রেখেছেন বেশ প্রশস্ততা। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها : أَنَّ رَجُلاً، قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَقَرَأَ فَرَفَعَ صَوْتَهُ بِالْقُرْآنِ، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ” يَرْحَمُ اللَّهُ فُلاَنًا، كَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ أَذْكَرَنِيهَا اللَّيْلَةَ كُنْتُ قَدْ أَسْقَطْتُهَا ”
৫.অর্থ: আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি রাতে নামায আদায় করাকালে উচ্চস্বরে কিরা’আত পাঠ করে। অতঃপর সকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন। সে আমাকে গতরাতে কয়েকটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমি ভুলতে বসেছিলাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৩১ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা কেউ নফল নামায দিনের বেলায় আদায় করলে নিম্নস্বরে তিলাওয়াত করবে।আর রাতে নফল নামায আদায় করলে উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরে উভয়ভাবেই কিরাত পড়তে পারবে। তবে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া উত্তম। উঁচু আওয়াযের ক্ষেত্রে সীমা এত অতিরিক্ত করা যাবে না যার দ্বারা অন্যের কষ্ট হয়। সুতরাং এতটুকু আওয়াযে তিলাওয়াত করবে যাতে নিজের কানে আওয়ায শুনতে পায়।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আবু বকর সিদ্দিক।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply