ইস্তিনজার সময় সালাম ও তার জবাব দেওয়ার বিধান। 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম! আমরা জানি ইস্তিনজার সময় সালাম দেয়া এবং সালামের জবাব দেয়া উভয়টিই নিষিদ্ধ। কিন্তু একটা বইয়ের মধ্যে পড়লাম ইস্তিনজার সময় সালাম দেয়া যাবে এবং পবিত্রতা অর্জনের পর জবাব দিতে হবে। এখন আপনার কাছে জানতে চাই। আমার জানা সঠিক নাকি এই বইয়ের কথা সঠিক ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

যারা বলে সব জায়গায় সালাম দেওয়া যায়, এমনকি পেশাব পায়খানারত ব্যক্তিকেও সালাম দেওয়া যায় তাদের কথা ঠিক নয়। বরং ইস্তিনজার সময় সালাম দেওয়া এবং সালামের জবাব দেওয়া উভয়টিই নিষিদ্ধ ও নাজায়েয। তবে কেউ যদি এই মাসয়ালা না জানার কারণে সালাম দিয়ে ফেলে। তাহলে ইস্তিনজার পরে সে উপস্থিত থাকলে জবাব দেওয়া জায়েয আছে।

 

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَجُلاً، مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ إِذَا رَأَيْتَنِي عَلَى مِثْلِ هَذِهِ الْحَالَةِ فَلاَ تُسَلِّمْ عَلَىَّ فَإِنَّكَ إِنْ فَعَلْتَ ذَلِكَ لَمْ أَرُدَّ عَلَيْكَ ‏.‏

 

১.অর্থ: জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন পেশাবরত ছিলেন। সে তাঁকে সালাম করলো। রসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি আমাকে এ অবস্থায় দেখতে পেলে আমাকে সালাম করবে না। কারণ তুমি তা করলে আমি তোমার সালামের উত্তর দিতে পারবো না। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৫২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَجُلاً، مَرَّ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَبُولُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ 

 

২.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন পেশাব করছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাম করল। কিন্তু তিনি তার জবাব দিলেন না। (ইফা. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯)

 

عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ سَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَبُولُ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ حَتَّى تَوَضَّأَ فَلَمَّا تَوَضَّأَ رَدَّ عَلَيْهِ 

 

৩.অর্থ: মুহাজির ইবনে কুনফুয (রা.) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) পেশাব করছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁকে সালাম দেন। কিন্তু নবী (ﷺ) অযু করার পূর্বে সালামের জবাব দেননি; উযু করার পর সালামের জবাব দেন। (ইফা. সুনানে নাসায়ী হাদীস নং ৩৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ كَانَ يُقَالُ لَا يَقْرَأُ الْجُنُبُ وَلَا الْحَائِضُ وَلَا يُقْرَأُ فِي الْحَمَّامِ وَحَالَانِ لَا يَذْكُرُ الْعَبْدُ فِيهِمَا اللَّهَ عِنْدَ الْخَلَاءِ وَعِنْدَ الْجِمَاعِ إِلَّا أَنَّ الرَّجُلَ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ بَدَأَ فَسَمَّى اللَّهَ

 

৪.অর্থ: ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণিত: আবু ওয়াইল (রহ.) বলেন, তার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, জুনুবী ব্যক্তি (কুরআন থেকে কিছু) পাঠ করবে না; আর হায়েযগ্রস্ত মহিলাও পাঠ করবে না এবং গোসলখানার মধ্যেও কিছু পাঠ করবে না। দু’টি অবস্থায় বান্দা আল্লাহর যিকির করবে না: পায়খানায় অবস্থানকালে এবং স্ত্রী সহবাসকালীন অবস্থায়। তবে কোন লোক যখন স্ত্রী সহবাস করতে চায়বে, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করবে। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ১০৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

মোটকথা এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করবে। কিন্তু ইস্তিনজার সময় সালাম দেওয়া এবং সালামের জবাব দেওয়া উভয়টিই নাজায়েয। তাই এই সময়ে কেউ সালাম দিবে না আবার সালামের জবাবও দিবে না। অবশ্য কেউ সালাম দিয়ে ফেললে ইস্তিনজার পর জবাব দেওয়া জায়েয আছে। 

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- মুহা. আবুল হাসান।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *