অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে কি ? 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম ! আমার জানার বিষয় হলো, অপবিত্র ব্যক্তি বা হায়েয ও নিফাসগ্ৰস্ত মহিলা কুরআন স্পর্শ করে অথবা মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পারবে কি ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

অপবিত্র ব্যক্তি বা হায়েয ও নিফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা নাজায়েয। চাই কুরআন মুখস্থ করে হোক অথবা স্পর্শ করে। তবে মাদরাসার শিক্ষিকার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আলাদা আলাদা শ্বাসে এক দুই শব্দ করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে রিডিং পড়ানো জায়েয আছে। কিন্তু সরাসরি পুরো আয়াত বা সূরা পড়ানো নাজায়েয। অবশ্য অন্যের তিলাওয়াত শ্রবণ করা, দু’আ হিসেবে কোন আয়াত বা আয়াতের অংশ বিশেষ পাঠ করা ও জিকির-আযকার, তাসবীহ- তাহলীল এবং দু’আ-দরুদ পাঠ করা জায়েয আছে। 

 

لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَؕ

 

১. অর্থ: পবিত্রগণ ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াকিয়া: আয়াত নং ৭৯)

 

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ: أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعَمْرو بن حزم: أَن لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

 

২.অর্থ: আমর ইবনে হাযম (রা.) থেকে বর্ণিত: 

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) আমর ইবনে হাযম এর কাছে, এই মর্মে চিঠি লিখেছেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৪৬৫ মুয়াত্তা মালেক হাদীস নং ৪৫৬ হাদীসের মান: সহীহ)

 

أَنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَّكِئُ فِي حَجْرِي وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ 

 

৩.অর্থ: আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,নবী (ﷺ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েযের অবস্থায় ছিলাম। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৯৩ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ حَمَّادٍ عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ أَرْبَعَةٌ لَا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ عِنْدَ الْخَلَاءِ وَفِي الْحَمَّامِ وَالْجُنُبُ وَالْحَائِضُ إِلَّا الْآيَةَ وَنَحْوَهَا لِلْجُنُبِ وَالْحَائِضِ

 

৪.অর্থ: হাম্মাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, ইবরাহীম রহ. বলেন, চারটি অবস্থায় কুরআন পাঠ করবে না। 

১.পায়খানায় ২.গোসলখানায় অবস্থানকালে 

৩.‘জুনুবী’ অবস্থায় এবং ৪. হায়েযগ্রস্ত অবস্থায়। তবে জুনুবী ব্যক্তি ও হায়েযগ্রস্ত মহিলা এক আয়াত 

ও এর অনুরূপ পরিমাণ পাঠ করতে পারবে। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ১০২৭ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ اللَّهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ 

 

৫.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সব সময়ই আল্লাহর যিকির করতেন। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭১২ হাদীসের মান: সহীহ) 

 

عَنْ فِرَاسٍ عَنْ عَامِرٍ الْجُنُبُ وَالْحَائِضُ لَا يَقْرَآنِ الْقُرْآنَ

 

৬. অর্থ: ফিরাস (রহ.) হতে বর্ণিত: আমের (রহ.) বলেন, নাপাক ব্যক্তি (যার উপর গোসল ফরয) ও হায়েযগ্রস্ত মহিলা কুরআন পাঠ করবে না। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ১০২৫ হাদীসের মান: হাসান)

 

عَنْ أَبِي وَائِلٍ قَالَ كَانَ يُقَالُ لَا يَقْرَأُ الْجُنُبُ وَلَا الْحَائِضُ وَلَا يُقْرَأُ فِي الْحَمَّامِ وَحَالَانِ لَا يَذْكُرُ الْعَبْدُ فِيهِمَا اللَّهَ عِنْدَ الْخَلَاءِ وَعِنْدَ الْجِمَاعِ إِلَّا أَنَّ الرَّجُلَ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ بَدَأَ فَسَمَّى اللَّهَ

 

৭.অর্থ: ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণিত: আবু ওয়াইল (রহ.) বলেন, তার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, জুনুবী ব্যক্তি (কুরআন থেকে কিছু) পাঠ করবে না; আর হায়েযগ্রস্ত মহিলাও পাঠ করবে না এবং গোসলখানার মধ্যেও কিছু পাঠ করবে না। দু’টি অবস্থায় বান্দা আল্লাহর যিকির করবে না: পায়খানায় অবস্থানকালে এবং স্ত্রী সহবাসকালীন অবস্থায়। তবে কোন লোক যখন স্ত্রী সহবাস করতে চায়বে, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করবে। (সুনানে দারেমী হাদীস নং ১০৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

نَا أَبُو الْغَرِيفِ الْهَمْدَانِيُّ ، قَالَ : كُنَّا مَعَ عَلِيٍّ فِي الرَّحْبَةِ ، فَخَرَجَ إِلَى أَقْصَى الرَّحْبَةِ ، فَوَاللَّهِ ، مَا أَدْرِي أَبَوْلًا أَحْدَثَ أَوْ غَائِطًا ، ثُمَّ جَاءَ فَدَعَا بِكُوزٍ مِنْ مَاءٍ ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ، ثُمَّ قَبَضَهُمَا إِلَيْهِ ، ثُمَّ قَرَأَ صَدْرًا مِنَ الْقُرْآنِ ، ثُمَّ قَالَ : اقْرَءُوا الْقُرْآنَ مَا لَمْ يُصِبْ أَحَدَكُمْ جَنَابَةٌ ، فَإِنْ أَصَابَتْهُ جَنَابَةٌ فَلَا ، وَلَا حَرْفًا وَاحِدًا

 

৮.অর্থ: আবু বকর আন-নায়সাপুরী (রহ.) ও আবুল গারীফ আল-হামদানী (রহ.) বলেন, আমরা আলী (রা.) এর সাথে আর-রাহবা নামক স্থানে ছিলাম। তিনি আর-রাহবার শেষ প্রান্তে গেলেন। আল্লাহর শপথ! আমি জানি না তিনি সেখানে গিয়ে কি পেশাব করেছেন নাকি পায়খানা করেছেন। তারপর তিনি ফিরে এসে এক পাত্র পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি 

তার উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। উভয় হাত নিজের দিকে গুটিয়ে আনেন, তারপর কুরআনের প্রথম দিক থেকে পাঠ করেন এবং বলেন, তোমাদের যে কেউ অপবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কুরআন পাঠ করতে পারবে এবং অপবিত্র হলে কুরআন পাঠ করবে না, এমনকি একটি শব্দও পাঠ করবে না। (সুনানে দারাকুতনী হাদীস নং ৪১৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا ‏.‏

 

৯.অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, 

শরীর নাপাক না হলে রসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সর্ব অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করাতেন। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৪৬ হাদীসের মান: হাসান) 

 

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাকীম ও যাহাবী (রহ.) এর সনদকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপভাবে ইবনুস সুকূন, আব্দুল হক ও বাগাভী (রহ.) ‘শারহু সুন্নাহ’ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন। হাফিয (রহ.) বলেন, হাদীসটি সুনান প্রণেতারা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী ও ইবনে হিব্বান একে সহীহ বলেছেন এবং কতিপয় ইমাম একে দুর্বল বলেছেন। সঠিক হচ্ছে, এটি হাসান পর্যায়ের, যা দলিলের উপযোগী। (ফাতহুল বারী ১/৩৪৮)

 

প্রিয় পাঠক ! আশা করি অপবিত্র ব্যক্তি বা ঋতুবতী মহিলার কুরআন তিলাওয়াত করা নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি আপনার কাছে এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য মাদরাসা শিক্ষিকার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে পূর্ণ আয়াত তিলাওয়াত না করে এক দুই শব্দ করে বলে দেওয়া জায়েয আছে। আর জিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল এবং দু’আ-দরুদও পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আব্দুল মুমিন আজাদ।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *