কোন কোন কারণে গোসল ফরয হয় ? 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুমহ যরত আশাকরি মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে ভালো আছেন। আমার প্রশ্ন হলো, কোন কোন কারণে মানুষের উপর গোসল ফরয হয়। উত্তরটি দ্রুত দিলে ভালো হয়।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

ইসলামী শরীয়তে ফরয গোসল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেসব কারণে শরীর নাপাক থাকে এবং পবিত্র হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক গোসল করতে হয় তাকেই ফরয গোসল বলে। কারো উপর গোসল ফরয হলে সঠিক পদ্ধতিতে গোসল না করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি অপবিত্র থাকে। আর অপবিত্র অবস্থায় নামায, কুরআন তিলাওয়াত ছাড়াও অনেক ইবাদত রয়েছে যেগুলো নাপাক অবস্থায় সহীহ হয় না। ইসলামে চারটি কারণে গোসল ফরয হয়। এ অবস্থায় গোসল না করা পর্যন্ত শরীর নাপাক থাকে। সেই কারণগুলো হলো:-

 

১.সহবাস করলে কিংবা স্বামীর লিঙ্গের শুধু খতনার স্থানটুকু স্ত্রীর লিঙ্গে প্রবেশ করলে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল ফরয হবে।

 

قَالَتْ إِنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يُجَامِعُ أَهْلَهُ ثُمَّ يُكْسِلُ هَلْ عَلَيْهِمَا الْغُسْلُ وَعَائِشَةُ جَالِسَةٌ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنِّي لأَفْعَلُ ذَلِكَ أَنَا وَهَذِهِ ثُمَّ نَغْتَسِلُ ‏”‏

 

অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার কোন এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তারপর বীর্য নির্গত হবার পূর্বেই তার পুরুষাঙ্গ বের করে ফেলে তাহলে কি তাদের উভয়ের ওপর গোসল ফরয হবে ? এ সময়ে আয়েশা (রা.) সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আয়েশা ঐরূপ করি এরপর আমরা গোসল করে ফেলি। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬৭৯ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ فَعَلْتُهُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاغْتَسَلْنَا ‏.‏

 

অর্থ: আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, পুরুষাংগের খতনার স্থান স্ত্রীর (যৌনাংগের) খতনার স্থান অতিক্রম করলে গোসল আবশ্যক হয়ে যায়। আমি (আয়িশা) ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছি, অতঃপর আমরা গোসল করেছি। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১০৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

 ২. স্বপ্নদোষ হলে অর্থাৎ পুরুষ বা মহিলা ঘুম থেকে জেগে কাপড়ে বা শরীরে বীর্যের কোন চিহ্ন দেখতে পেলে গোসল ফরয হবে।

 

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنْ غُسْلٍ إِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ ‏”‏‏.‏ فَغَطَّتْ أُمُّ سَلَمَةَ ـ تَعْنِي وَجْهَهَا ـ وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَتَحْتَلِمُ الْمَرْأَةُ قَالَ ‏”‏ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكِ فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا ‏”‏‏.‏ 

 

অর্থ: উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর খিদমতে উম্মে সুলাইম (রা.) এসে বললেনঃ ইয়া রাসুল্লাহ! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে ? নবী (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে। তখন উম্মে সালমা (লজ্জায়) তাঁর মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হয় কি ?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাঁর সন্তান তাঁর আকৃতি পায় কিরূপে ? (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৩২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يَجِدُ الْبَلَلَ وَلاَ يَذْكُرُ احْتِلاَمًا قَالَ ‏”‏ يَغْتَسِلُ ‏”‏ ‏.‏ وَعَنِ الرَّجُلِ يَرَى أَنَّهُ قَدِ احْتَلَمَ وَلَمْ يَجِدْ بَلَلاً قَالَ ‏”‏ لاَ غُسْلَ عَلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ تَرَى ذَلِكَ غُسْلٌ قَالَ ‏”‏ نَعَمْ إِنَّ النِّسَاءَ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‏”‏ ‏.‏

 

অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কেউ ঘুম থেকে জোগে (তার শরীরে বা কাপড়ে) বীর্যের আর্দ্রতা দেখতে পেল কিন্তু স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে তার মনে পড়ে না তার সম্পর্কে নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তাকে গোসল করতে হবে। এমনিভবে কারো যদি স্বপ্নদোষের কথা মনে পড়ে কিন্তু জেগে কোনরূপ আর্দ্রতা দেখতে না পায় তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রাসূল (সা.) বললেনঃ তাকে গোসল করতে হবে না। উম্মু সালমা (রা.) তখন বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! মেয়েদের কেউ যদি এই ধরনের কিছু দেখে তবে তাদেরও কি গোসল করতে হবে ? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, মেয়েরা তো পুরুষেরই অংশ। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১১৩ হাদীসের মান: সহীহ)

 

৩. উত্তেজনা বশত বীর্য বের হলে চাই সেটা যে কোন উপায়ে বের হোক না কেন গোসল ফরয হবে। 

 

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمَذْىِ فَقَالَ ‏”‏ مِنَ الْمَذْىِ الْوُضُوءُ وَمِنَ الْمَنِيِّ الْغُسْلُ ‏”‏ ‏

অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মযী সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন, মযী বের হলে অযু করতে হবে আর মনী বের হলে গোসল করতে হবে। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১১৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৯৩ হাদীসের মান: সহীহ)

 

৪.মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব তথা হায়েয বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত তথা নিফাস বন্ধ হলে গোসল ফরয হবে।

 

وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ هو اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡہُنَّ حَتّٰی یَطۡہُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَہَّرۡنَ فَاۡتُوۡہُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ

 

অর্থ: আর তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকো এবং তারা (গোসল করে) পবিত্র 

না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের সঙ্গে সহবাস করো। যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারদেরকে এবং পবিত্রতা অর্জনকারী -দেরকে ভালোবাসেন। 

(সূরা বাকারা: আয়াত নং ২২২)

 

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ أَبِي حُبَيْشٍ، كَانَتْ تُسْتَحَاضُ فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ “‏ ذَلِكِ عِرْقٌ، وَلَيْسَتْ بِالْحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِي وَصَلِّي ‏”‏‏.‏

 

অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতেমা বিনতে আবু হুরাইশ (রা.)-এর ইস্তিহাযা হতো। তিনি এ বিষয়ে নবী (সা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল (সা.) বললেন, এ হচ্ছে রগের রক্ত, হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং হায়েয শুরু হলে নামায ছেড়ে দেবে। আর হায়েয শেষ হলে গোসল করে নামায আদায় করবে। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩১৪ হাদীসের মান: সহীহ)

 

فَكَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الأَرْقَمِ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ يُخْبِرُهُ أَنَّ سُبَيْعَةَ بِنْتَ الْحَارِثِ أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا كَانَتْ تَحْتَ سَعْدِ ابْنِ خَوْلَةَ، وَهْوَ مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَىٍّ، وَكَانَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا، فَتُوُفِّيَ عَنْهَا فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ وَهْىَ حَامِلٌ، فَلَمْ تَنْشَبْ أَنْ وَضَعَتْ حَمْلَهَا بَعْدَ وَفَاتِهِ، فَلَمَّا تَعَلَّتْ مِنْ نِفَاسِهَا

 

অর্থ: উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম (রা.) আবদুল্লাহ ইবনে উতবাকে লিখে জানালেন যে, সুবাইয়া বিনতে হারিস তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বানু আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের সা’দ ইবনে খাওলার স্ত্রী ছিলেন। সা‘দ (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি বিদায় হজ্জের বছর ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তার ইন্তেকালের কিছুদিন পরেই তিনি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর (গোসল করে) নিফাস থেকে পবিত্র হলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস ৩৭০১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৫৮৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো, চারটি কারণের কোন একটি কারণ পাওয়া গেলেই মানুষ নাপাক হয়ে যায়। এই নাপাক অবস্থা থেকে পবিত্র হতে হলে অবশ্যই ফরয গোসল আদায় করতে হবে। কেউ যদি ফরয গোসল আদায় না করে তাহলে সে সর্বদাই অপবিত্র থাকবে। এতে করে তার অনেক ইবাদত বন্দেগী কবুল হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে প্রতিটি আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আব্দুল হালিম।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *