প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো প্রয়োজনে বাথরুমে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
গোসলের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবার জন্যই লজ্জাশীলতা ও পর্দার প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। পুরুষদের জন্য পর্দার মধ্যে গোসল করা সুন্নত আর মহিলাদের জন্য ফরয। অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে উলঙ্গ হয়েও গোসল করা জায়েয। তবে সেটা এমন নির্জন স্থান হতে হবে যেখানে কেউ তাকে দেখবে না। কিন্তু সতর ঢেকে পর্দার মধ্যে গোসল করাই উত্তম।
عَنْ يَعْلَى، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى رَجُلاً يَغْتَسِلُ بِالْبَرَازِ بِلاَ إِزَارٍ فَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ فَإِذَا اغْتَسَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ ” .
১.অর্থ: ইয়ালা (রা.) থেকে বর্ণিত: একদা রসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে খোলা জায়গায় (পর্দা ব্যতীত) উলঙ্গ হয়ে গোসল করতে দেখলেন। অতঃপর তিনি মিম্বরে উঠে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাশীল ও পর্দাকারী। তিনি লজ্জা ও পর্দা করাকে বেশি পছন্দ করেন। তাই তোমাদের কেউ যখন গোসল করে, তখন সে যেন পর্দা করে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৯৭১ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৪০৬ হাদীসের মান: সহীহ)
مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ بِنْتِ أَبِي طَالِبٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أُمَّ هَانِئٍ بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ، تَقُولُ ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُه
২.অর্থ:উম্মে হানী বিনতে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি রসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে গেলাম। তখন আমি তাকে গোসলরত অবস্থায় পেলাম। আর তার কন্যা ফাতেমা একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৭৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يَدْخُلِ الْحَمَّامَ إِلاَّ بِمِئْزَرٍ .
৩.অর্থ: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে সে যেন ইযার (কাপড়) পরিহিত ছাড়া বাথরুমে প্রবেশ না করে। (ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৪০১ হাদিসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنَا بَهْزُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَدِّي، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ عَوْرَاتُنَا مَا نَأْتِي مِنْهَا وَمَا نَذَرُ قَالَ ” احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مِمَّا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ” . فَقَالَ الرَّجُلُ يَكُونُ مَعَ الرَّجُلِ قَالَ ” إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ لاَ يَرَاهَا أَحَدٌ فَافْعَلْ ” . قُلْتُ وَالرَّجُلُ يَكُونُ خَالِيًا . قَالَ ” فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ ” .
৪.অর্থ: বাহায ইবনে হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব ? তিনি বললেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সকলের দৃষ্টি হতে তোমার লজ্জাস্থান হেফাযত করবে। মুআবিয়া (রা.) বললেন, যদি একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের সঙ্গে অবস্থান করে তাহলে ? তিনি বললেনঃ যথাসম্ভব তোমার সতর যেন কেউ না দেখে সে ব্যবস্থা করবে। আমি বললাম, যদি কোন পুরুষ একাকি থাকে ? তিনি বললেন, আল্লাহ্ অধিক অগ্রগণ্য যে, মানুষের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি লজ্জাশীল হতে হবে। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৭৬৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৯২০ হাদীসের মান: হাসান)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ ”.
৫.অর্থ: আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ ”.
৬.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য নসীহত করছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৩ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ الْحَيَاءُ مِنَ الإِيمَانِ وَالإِيمَانُ فِي الْجَنَّةِ وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِي النَّارِ ” .
৭.অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) স্থান হলো জান্নাতে। নির্লজ্জতা হলো অন্যায়ের অঙ্গ, আর অন্যায়ের (অন্যায়কারীর)স্থান হলো জাহান্নামে। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২০১৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪১৮৪ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখিত হাদীস-সমূহের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, একান্ত প্রয়োজনে বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয। তবে প্রয়োজন ছাড়া উলঙ্গ হয়ে গোসল করা উচিত নয়। কারণ এটা অনুত্তম এবং সুন্নত পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধি-নিষেধ মানার তাওফিক দান করুন আমীন।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরাফ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply