হযরত মুসা (আ.) কর্তৃক আজরাইল (আ.)-কে থাপ্পড় মারার ঘটনা কি সত্য ?     

 

 

 প্রশ্নঃ 

 

আসসালামু আলাইকুম! হুজুর আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।আমাদের এলাকার এক লোক বললেন, একবার হযরত মুসা (আ.) নাকি হযরত আজরাইল (আ.) কে থাপ্পড় মেরেছিলেন। এই কথা কি সত্য ? কুরআন হাদীসে এর কোন ভিত্তি আছে কি ? দলিলসহ জানালে উপকৃত হবো।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ 

 

হযরত মুসা (আ.) আজরাইল (আ.)-কে থাপ্পড় মেরেছিলেন এই কথাটা সত্য। হাদীসের কিতাবাদীতে ঘটনাটির উল্লেখ যেভাবে আছে। তা হলোঃ-

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ ” أُرْسِلَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوسَى ـ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ ـ فَلَمَّا جَاءَهُ صَكَّهُ فَرَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لاَ يُرِيدُ الْمَوْتَ. فَرَدَّ اللَّهُ عَلَيْهِ عَيْنَهُ وَقَالَ ارْجِعْ فَقُلْ لَهُ يَضَعُ يَدَهُ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ، فَلَهُ بِكُلِّ مَا غَطَّتْ بِهِ يَدُهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ سَنَةٌ

 

১. অর্থঃ আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পাঠানো হল। তিনি তাঁর কাছে আসলে, মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে চপেটাঘাত করলেন। (এতে তাঁর চোখ বেরিয়ে গেল।) তখন মালাকূল মাওত তাঁর প্রতিপালক এর নিকটে ফিরে গিয়ে বলবেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ তাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করলেন, আবার গিয়ে তাঁকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাঁর হাত রাখবেন, তখন তাঁর হাত যতটুকু আবৃত করবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হবে। (ইফা.সহীহ বুখারী হাদীস নং ১২৫৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৯৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)

 

এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়। অনেকে হয়তো ভেবে থাকবে যে, মুসা (আ.) এর মত একজন সম্মানিত নবী হয়ে আজরাইল (আ.) কে থাপ্পড় মারাটা চরম বেয়াদবির পর্যায়ে পড়ে যা নবীদের শান হতে পারে না। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) এ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।

 

২. ইবনে হিব্বান (রহ.) উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করে এ হাদীসে কিছু জটিলতা রয়েছে বলে ইঙ্গিত করে এগুলোর যে উত্তর প্রদান করেছেন তার সার সংক্ষেপ হলোঃ- মৃত্যুর ফেরেশতা যখন মুসা (আ.)-কে মৃত্যুর কথা বললেন, তখন তিনি তাকে চিনতে পারেননি৷ কেননা,তখন তিনি মুসা (আ.) এর কাছে অপরিচিত অবয়বে আগমন করেছিলেন ৷ যেমন: একবার জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকটে এক বেদুঈনের অবয়বে আগমন করেছিলেন ৷ ইবরাহীম (আ.) ও লুত (আ.)-এর নিকট ফেরেশতাগণ যুবকের অবয়বে এসেছিলেন। (সূরা আয-যারিয়াত আয়াত নং ২৪ ও ২৫) 

 

তাই তারা তাদেরকে প্রথমে চিনতে পারেননি ৷ অনুরুপভাবে মুসা (আ.)-ও তাঁকে সম্ভবত চিনতে পারেননি, তাই তাকে চপেটাঘাত করে তাঁর চোখ নষ্ট করে দিয়েছিলেন৷ কেননা তিনি বিনা অনুমতিতে মুসা (আ.) এর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন ৷ এই ব্যাখ্যাটি আমাদের শরীয়ত সম্মত হাদীসের কিতাবে এই ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে । যেমনঃ-

 

َ حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” مَنِ اطَّلَعَ فِي دَارِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَفَقَأُوا عَيْنَهُ فَقَدْ هَدَرَتْ عَيْنُهُ  

 

৩. অর্থঃ আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত যে, 

তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো ঘরে তার বিনা অনুমতিতে ঊঁকি মারে, আর সে তার চোখ কানা করে দেয়, তবে এর কোন বদলা নেয়া হবে না। (ইফা.সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৫০৮২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা বুঝা গেল মুসা (আ.) আজরাইল (আ.)-কে থাপ্পড় দিয়েছিলেন এই ঘটনা সত্য। তবে আমাদের দেশে যেভাবে রঙ ঢং করে বলা হয় ঘটনাটি সেভাবে ঘটেনি। সুতরাং আমাদেরও উচিত সঠিকভাবে জেনে সঠিক ভাবে মানুষকে বলা। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। 

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আরিফুল ইসলাম।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল। 

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *