নামাযীর সামনে দিয়ে কোনো নারী, গাধা বা কালো কুকুর যাতায়াত করলে কি নামায ভেঙ্গে যায় ?

 

 প্রশ্নঃ  

 

আসসালামু আলাইকুম। নামাযীর সামনে দিয়ে কোনো সাবালিকা নারী, গাধা বা কালো কুকুর যাতায়াত করলে কি নামায ভঙ্গ হয়ে যায় ? 

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে পুরুষ, মহিলা কিংবা অন্য কোন জীবজন্তু যেই যাতায়াত করুক না কেন নামায ভঙ্গ হবে না। যে সব হাদীসে সুতরা না থাকলে নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে কুকুর,গাধা কিংবা মহিলা চলাচল করলে নামায ভেঙ্গে যায় বলা হয়েছে। সে সব হাদীস সম্পর্কে ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বলেন, এখানে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার অর্থ নামাযের খুশু খুযু নষ্ট হয়ে যায়, এর অর্থ এই নয় যে নামায নষ্ট হয়ে যায়। আর হাদীসের নিষেধাজ্ঞার দ্বারা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কঠোরতাও বোঝানো হয়েছে। চায় সে পুরুষ, মহিলা কিংবা কোনো জীবজন্তু হোক।

 

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهُ ذُكِرَ عِنْدَهَا مَا يَقْطَعُ الصَّلاَةَ، فَقَالُوا: يَقْطَعُهَا الكَلْبُ وَالحِمَارُ وَالمَرْأَةُ، قَالَتْ: لَقَدْ جَعَلْتُمُونَا كِلاَبًا، «لَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي، وَإِنِّي لَبَيْنَهُ وَبَيْنَ القِبْلَةِ، وَأَنَا مُضْطَجِعَةٌ عَلَى السَّرِيرِ، فَتَكُونُ لِي الحَاجَةُ، فَأَكْرَهُ أَنْ أَسْتَقْبِلَهُ، فَأَنْسَلُّ انْسِلاَلًا»

 

১.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: একবার তার সামনে নামায নষ্টকারী জিনিসের আলোচনা করা হল। লোকেরা বলল, কুকুর, গাধা ও মহিলা নামায নষ্ট করে দেয়। আয়েশা (রা.) বললেন, তোমরা আমাদের কুকুরের সমান করে দিয়েছ! আমি নবী (সা.)-কে নামায আদায় করতে দেখেছি আর আমি তার ও কিবলার মাঝে চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম। কোন কোন সময় আমার বের হওয়ার দরকার হতো তখন তার সামনের দিকে যাওয়া অপছন্দ করতাম। এজন্য আমি চুপি চুপি সরে পড়তাম। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫১১ সহীহ 

মুসলিম হাদীস নং ৫১২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ صُهَيْبٍ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، يُحَدِّثُ أَنَّهُ مَرَّ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ وَغُلاَمٌ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ عَلَى حِمَارٍ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يُصَلِّي فَنَزَلُوا وَدَخَلُوا مَعَهُ فَصَلَّوْا وَلَمْ يَنْصَرِفْ فَجَاءَتْ جَارِيَتَانِ تَسْعَيَانِ مِنْ بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَأَخَذَتَا بِرُكْبَتَيْهِ فَفَرَعَ بَيْنَهُمَا وَلَمْ يَنْصَرِفْ

 

২.অর্থ: সুহাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তিনি এবং বনী হাশিমের এক বালক রসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে দিয়ে গাধার উপর সওয়ার হয়ে গেলেন। তখন তিনি নামায আদায় করছিলেন। তখন তারা অবতরণ করে তাঁর সাথে নামায আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায সমাপ্ত না করতেই বনী আবদুল মুত্তালিবের দুই মেয়ে দৌড়ে আসল। তারা এসে তার হাটুদ্বয় ধরল। তিনি তাদের উভয়কে পৃথক করে দিলেন। তখনও তিনি নামায শেষ করেননি। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৭৫৪ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৭১৬ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ أَقْبَلْتُ رَاكِبًا عَلَى حِمَارٍ أَتَانٍ، وَأَنَا يَوْمَئِذٍ قَدْ نَاهَزْتُ الاِحْتِلاَمَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِمِنًى إِلَى غَيْرِ جِدَارٍ، فَمَرَرْتُ بَيْنَ يَدَىْ بَعْضِ الصَّفِّ وَأَرْسَلْتُ الأَتَانَ تَرْتَعُ، فَدَخَلْتُ فِي الصَّفِّ، فَلَمْ يُنْكَرْ ذَلِكَ عَلَىَّ

 

৩.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একবার একটি মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম। আর রাসূল (সা.) তখন কোন দেওয়াল সামনে না রেখেই মিনায় নামায আদায় করছিলেন। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে গেলাম এবং মাদী গাধাটিকে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিলাম। এরপর আমি কাতারের ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করেনি। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫০৪ হাদীসের মান: সহীহ)  

 

فَقَالَ أَبُو جُهَيْمٍ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ يَعْلَمُ المَارُّ بَيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ» قَالَ أَبُو النَّضْرِ: لاَ أَدْرِي، أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، أَوْ شَهْرًا، أَوْ سَنَةً

 

৪.অর্থ: আবু জুহাইম (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় পাপ, তাহলে সে নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (বছর বা মাস বা দিন) নামাযীর সালাম ফিরার অপেক্ষা করাকে উত্তম মনে করতো। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৮৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০১৫ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উপরোক্ত সহীহ হদীসগুলো দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, মহিলা, কালো কুকুর এবং গাধা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে নামায নষ্ট হবে না। কারণ এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে আমরা এই হুকুমের বিপরীত কয়েকটি বর্ণনা দেখতে পাই। কিন্তু যেহেতু নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে হাদীসে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সুতরাং নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা কারো জন্যই উচিত নয়। চায় সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা। অতএব আমাদের উচিত হবে আমরা যেন কোনো আড়াল জায়গায় নামায আদায় করি। আর যদি খালি জায়গায় নামায আদায় করতেই হয় তাহলে যেন আমরা সুতরা অবশ্যই ব্যবহার করি।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর লিখনে- মো.মাঈনুল ইসলাম।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল। 

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *