প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! আমার জানার বিষয় হলো হালাল প্রাণীর মল-মুত্র পাক না নাপাক ? সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক মাসয়ালাটি জানতে চাই।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
হালাল হারাম সকল প্রাণীর মল-মুত্রই নাপাক। যারা বলে হালাল পশুর মল-মুত্র পাক। তারা এমন কোন হাদীস পেশ করতে পারে না যেখানে হালাল প্রাণীর পেশাব বা পায়খানাকে পবিত্র বলা হয়েছে। যে কোন প্রাণীরই মল মুত্র নাপাক তার প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
عَبْدَ اللَّهِ، يَقُولُ أَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْغَائِطَ، فَأَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، فَوَجَدْتُ حَجَرَيْنِ، وَالْتَمَسْتُ الثَّالِثَ فَلَمْ أَجِدْهُ، فَأَخَذْتُ رَوْثَةً، فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَأَخَذَ الْحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ وَقَالَ ” هَذَا رِكْسٌ “
১.অর্থ: আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) একবার টয়লেটে যাবার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে দিতে আমাকে আদেশ দিলেন। তখন আমি দু’টি পাথর পেলাম এবং তৃতীয়টির জন্য খোঁজাখুঁজি করলাম কিন্তু পেলাম না। তাই একখণ্ড শুকনো গোবর নিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি পাথর দু’টি নিলেন এবং গোবর খণ্ড ফেলে দিয়ে বললেন, এটা নাপাক। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫৬ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩১৪ হাদীসের মান: সহীহ)
এই হাদীসটিতে রাসূল (সা.) স্পষ্টভাবে গোবরকে নাপাক বলেছেন, সুতরাং হালাল হারাম সব ধরনের প্রাণীর মল তথা গোবর যে নাপাক তা বলাই বাহুল্য।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ,قَالَ ” إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِي نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيهِمَ
২.অর্থ: আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতা দেখে নেয়। যদি তাতে নাপাকি লেগে থাকে তবে তা পরিষ্কার করার পর তা পরিধান করে নামায পড়বে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৫০মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৭৬৬ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখ্য সাধারণত রাস্তা ঘাটে গরু ছাগল ইত্যাদি জীব জন্তুর পেশাব পায়খানাই পড়ে থাকে। সুতরাং এই হাদীস থেকেও তা নাপাক হওয়া প্রমাণিত হয়।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ عَنْ لُحُومِ الْجَلاَّلَةِ وَأَلْبَانِهَا .
৩.অর্থ: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) পায়খানা খেতে অভ্যস্ত পশুর গোশত খেতে ও তার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩১৮৯ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৭৪৩ হাদীসের মান: সহীহ)
এ হাদীসটিও গোশত খাওয়া হালাল এমন প্রাণীর পায়খানা নাপাক হওয়া প্রমাণ করে। কারণ এ সকল প্রাণীর পায়খানা যদি পাকই হবে তাহলে পায়খানা খাওয়ার কারণে এদের গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করা হবে কেন ?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “ أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنَ الْبَوْلِ ” .
৪.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বেশির ভাগ কবরে আযাব পেশাব থেকে অসতর্কতার কারণেই হয়ে থাকে। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৪৮ সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস নং ১৫৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَقَالَ ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ”
৫.অর্থ: ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এদের দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গোনাহের জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না যা থেকে বিরত থাকা কঠিন ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১২৭৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৭০ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখ্য এ সকল হাদীসে যে পেশাবের কথা বলা হয়েছে তা ব্যাপক অর্থে এসেছে। এখানে হালাল পশু ও হারাম পশুর মাঝে কোন পার্থক্য করা হয়নি। সুতরাং সব প্রাণীর পেশাবই এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া যুক্তিও হালাল প্রাণীর পেশাব নাপাক হবার দাবি করে। যেমন মানুষের গোশত পাক কিন্তু মানুষের রক্ত নাপাক, সেই সাথে তার পেশাবও নাপাক। এখন আমরা হালাল প্রাণীর দিকে তাকাই যেমন গরুর গোশত সর্ব সম্মত ভাবে পাক, তেমনি তার রক্তও সর্ব সম্মতভাবে নাপাক। সুতরাং তার পেশাবও নাপাক হবে কারণ তার রক্ত নাপাক।
* দুটি হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ، ثُمَّ سَمِعْتُهُ بَعْدُ يَقُولُ كَانَ يُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَبْلَ أَنْ يُبْنَى الْمَسْجِدُ
১.অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ছাগল থাকার স্থানে নামায আদায় করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আমি আনাস (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, মসজিদ নির্মাণের আগে তিনি (নবী (ﷺ)) ছাগল থাকার স্থানে নামায আদায় করেছেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪১৭ হাদীসের মান: সহীহ)
এই হাদীসের কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে। ১. হয়ত
ঐ জায়গার কোন এক পাশে পাক ছিল যেখানে ছাগলের পেশাব মুক্ত ছিল। ২. ছাগলের পেশাবের পরিমাণ খুব কম হওয়ায় তা খুব সহজেই শুকিয়ে যায়। যার কারণে ভূমি পবিত্র হয়ে যেতো। ৩. ছাগল রাখার স্থানে শুধু নামায পড়ার কারণেই যদি তার মল-মুত্র পাক সাব্যস্ত হয় তাহলে সকল হালাল পশু রাখার স্থানেই নামায পড়া জায়েয হতো। অথচ আমরা নিম্নোক্ত হাদীসে দেখতে পাই রাসূল (সা.) উটের স্থানে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। সুতরাং তাদের থিওরি দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে,উটের মল-মুত্র নাপাক। কেননা উটের থাকার স্থানে রাসূল (সা.) নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। একইভাবে ছাগলের স্থানে নামায পড়ায় যদি হালাল পশুর মলমুত্র পাক হওয়ার মানদণ্ড ধরা হয়। তাহলে একই কারণে হারাম পশুর পেশাবও পাক হবে। কারণ হাদীসে আছে, প্রায়ই কুকুর মসজিদে নববীতে গিয়ে প্রস্রাব করে দিতো। আর সাহাবায়ে কিরাম ঐ পেশাবের উপর পানি না ঢেলেই তার উপর নামায পড়তেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلُّوا فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ وَلاَ تُصَلُّوا فِي أَعْطَانِ الإِبِلِ
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ছাগল রাখার ঘরে নামায আদায় করতে পারো, তবে উট রাখার স্থানে নামায আদায় করবে না। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩৪৮ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৬৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ ابْنُ عُمَرَ كُنْتُ أَبِيتُ فِي الْمَسْجِدِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكُنْتُ فَتًى شَابًّا عَزَبًا وَكَانَتِ الْكِلاَبُ تَبُولُ وَتُقْبِلُ وَتُدْبِرُ فِي الْمَسْجِدِ فَلَمْ يَكُونُوا يَرُشُّونَ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ
অর্থ: আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) এর সময় মসজিদে ঘুমাতাম। ঐ সময় আমি অবিবাহিত যুবক ছিলাম। তখন কুকুর প্রায়ই মসজিদের মধ্যে যাতায়াত করত এবং পেশাব করে দিতো। সাহাবায়ে কিরামগগ এই পেশাবের উপর পানি ঢালতেন না। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৮২ হাদিসের মান: সহিহ)
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَدِمَ أُنَاسٌ مِنْ عُكْلٍ أَوْ عُرَيْنَةَ، فَاجْتَوَوُا الْمَدِينَةَ، فَأَمَرَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بِلِقَاحٍ، وَأَنْ يَشْرَبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا
২.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উকল বা ‘উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক (ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশে) মদিনায় এলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। নবী (সা.) তাদের (সদকার) উটের নিকট যাবার এবং ওর পেশাব ও দুধ পান করার নির্দেশ দিলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৩৩ হাদীসের মান: সহীহ)
এই হাদীসটির তিনটি ব্যাখ্যা হতে পারে। ১. ঐ সময় চিকিৎসার হালাল পদ্ধতি না থাকাই অপরাগ হিসেবে উটের পেশাব পানের কথা বলেছিলেন। উটের পেশাব পাক বা হালালের কারণে নয়। অপরাগ অবস্থায় মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়াও হালাল হয়ে যায়। তাই নাপাক ও হারাম হওয়া সত্ত্বেও অনুমোদন দিয়ে ছিলেন। ২.প্রথম যুগে উটের মুত্র পান করা বৈধ ছিল,কিন্তু পরবর্তীকালে উপরে বর্ণিত পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বনের হাদীসগুলোর মাধ্যমে সে বিধান রহিত হয়ে গেছে। ৩. উটের পেশাব যদি পাকই হবে তাহলে রাসূল (সা.) কেন উটের স্থানে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন? এর দ্বারা প্রমাণিত হয় হালাল ও হারাম সব প্রাণীর মল-মুত্র নাপাক।
উপরে আমরা হাদীসে দেখতে পেলাম পায়খানা খেতে অভ্যস্ত পশুর গোশত খেতে ও তার দুধ পান করতে নিষেধ করা হয়ছে। অপর হাদীসে জুতা চেক করে নাপাকি দূর করে নামায পড়তে বলা হয়েছে। কারণ রাস্তা ঘাটে গরু ছাগল ইত্যাদি জীব জন্তুর পেশাব পায়খানা পড়ে থাকে। সুতরাং সকল প্রাণীর মল তথা পায়খানা যে নাপাক তা স্পষ্ট। অন্য হাদীসে পেশাব থেকে না বাঁচার কারণে কবরে আযাব হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সঠিক মত হলো হালাল হারাম সকল প্রাণীর মল-মুত্রই নাপাক।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- যুবাইর হুসাইন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply