প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমরা ছোট থেকে শুনে এসেছি স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নাম মুখে নিতে হয় না। কিন্তু ইদানিং অনেক মেয়েরা স্বামীকে নাম ধরে ডেকে থাকে। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান কী জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
এই বিষয়টি মূলত সামাজিক রীতিনীতি এবং প্রচলন এর উপর নির্ভরশীল। যেই সমাজে স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক বা বেয়াদবি মনে করা হয়।সেখানে স্বামীকে নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। কিন্তু যেখানে অসম্মানজনক মনে করা হয় না সেখানে নাম ধরে ডাকাতে অসুবিধা নেই। মূলত যেভাবে ডাকলে স্বামী খুশী হবেন সেভাবেই ডাকা উচিত। তাছাড়া সাধারণ ভদ্রতাও হলো মানুষকে এমন শব্দে সম্বোধন করা যাতে সে খুশি হয় মনঃক্ষুণ্ণ না হয়। আরবীয় সমাজে নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক মনে করা হয় না। এই জন্য বিভিন্ন হাদীসেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا كَانَ بَيْنَ إِبْرَاهِيمَ وَبَيْنَ أَهْلِهِ مَا كَانَ، خَرَجَ بِإِسْمَاعِيلَ وَأُمِّ إِسْمَاعِيلَ، حَتَّى لَمَّا بَلَغُوا كَدَاءً نَادَتْهُ مِنْ وَرَائِهِ: يَا إِبْرَاهِيمُ إِلَى مَنْ تَتْرُكُنَا؟ قَالَ: إِلَى اللَّهِ، قَالَتْ: رَضِيتُ بِاللَّهِ،
১.অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম (আ.) (শিশুপুত্র) ইসমাঈল এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি পিছন থেকে ডেকে বললেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহীম (আ.) বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা (আ.) বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى» قَالَتْ: فَقُلْتُ: مِنْ أَيْنَ تَعْرِفُ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: ” أَمَّا إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، فَإِنَّكِ تَقُولِينَ: لاَ وَرَبِّ مُحَمَّدٍ، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى، قُلْتِ: لاَ وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ ” قَالَتْ: قُلْتُ: أَجَلْ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَهْجُرُ إِلَّا اسْمَكَ
২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি খুশি থাকলে বল, না! মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি রাগ থাকলে বল, না! ইবরাহীম (আ.)-এর রব -এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, ইয়া রসূলাল্লাহ! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২২৮ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৩৯ হাদীসের মান: সহীহ)
فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذِهِ زَيْنَبُ، فَقَالَ: «أَيُّ الزَّيَانِبِ؟» فَقِيلَ: امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: «نَعَمْ، ائْذَنُوا لَهَا» فَأُذِنَ لَهَا، قَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، إِنَّكَ أَمَرْتَ اليَوْمَ بِالصَّدَقَةِ، وَكَانَ عِنْدِي حُلِيٌّ لِي، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ، فَزَعَمَ ابْنُ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ وَوَلَدَهُ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَلَيْهِمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ ابْنُ مَسْعُودٍ، زَوْجُكِ وَوَلَدُكِ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتِ بِهِ عَلَيْهِمْ»
৩.অর্থঃ বলা হল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব? বলা হলো, ইবনে মাসউদের স্ত্রী। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেওয়া হল। তিনি বললেন, ইয়া নবীয়াল্লাহ! আজ আপনি সাদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সাদকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) মনে করেন, আমার এ সাদকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ইবনে মাসউদ (রা.) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সাদকায় অধিক হকদার। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৬২ হাদীসের মান: সহীহ)
قَالَ حَدَّثَتْنِي أُمُّ الدَّرْدَاءِ، قَالَتْ حَدَّثَنِي سَيِّدِي، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” مَنْ دَعَا لأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِينَ وَلَكَ بِمِثْلٍ
৪.অর্থ: উম্মে দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনিব (স্বামী) আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু’আ করে, তার জন্য একজন নিয়োজিত ফিরিশতা আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তোমার জন্যও অনুরূপ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মোস্তফা কামাল।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply