প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! সুতরা বানানোর মত কিছু না পাওয়া গেলে সুতরার স্থানে দাগ টেনে নেওয়া কতটুকু সঠিক দলিলসহ জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
নামাযী ব্যক্তির কর্তব্য হলো এমন জায়গায় নামায পড়া যাতে মানুষের চলাফেরায় অসুবিধা না হয়।
যদি এমন জায়গা পাওয়া না যায় তাহলে নামায শুরু করার আগেই সামনে সুতরা রাখবে। ঘটনাক্রমে যদি সুতরা বানানোরমত কোনো কিছু পাওয়া না যায়। তাহলে সুতরার স্থানে দাগ না টেনে কমপক্ষে টুপিটা হলেও রাখবে, যেন কিছু একটা রাখা হয়। যেখানে কোনো মানুষ যাওয়া আসার ভয় থাকবে না। সেখানে যদি টুপি রাখাও সম্ভব না হয় তাহলে সুতরার স্থানে মাটিতে একটি দাগ টেনে নিবে। আর এই দাগই তখন সুতরার স্থলাভিষিক্ত হবে।
فَاتَّقُوا اللّٰہَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ
১.অর্থ: তোমরা আল্লাহকে তোমাদের সাধ্যমত ভয় করো। (সূরা আত-তাগাবুন: আয়াত নং ১৬)
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، قَالَ رَأَيْتُ شَرِيكًا صَلَّى بِنَا فِي جَنَازَةٍ الْعَصْرَ فَوَضَعَ قَلَنْسُوَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ – يَعْنِي – فِي فَرِيضَةٍ حَضَرَت
২.অর্থ: সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শারীক (রহ.)-কে দেখেছি, তিনি এক জানাযার নামায আদায় করতে এসে আমাদের সাথে আসরের নামায পড়েন। তিনি (উক্ত ফরয নামাযে সুতরা না থাকায়) নিজের টুপি (খুলে) সামনে রাখেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৯১ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখ্য, কারো কারো ধারণা, ঐ যুগে টুপি এত লম্বা ছিল যে, তা দিয়ে সুতরাও দেওয়া যেত আসলে তা নয়। সুতরার ক্ষেত্রে হাদীসে যেহেতু এ কথা আছে যে, সুতরা দেওয়ার মতো কোনো কিছু পাওয়া না গেলে কমপক্ষে একটি রেখা হলেও যেন টেনে দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতেই তারা রেখা না টেনে কমপক্ষে টুপিটা হলেও রাখতেন। যেন কিছু একটা রাখা হয়। এটা টুপি লম্বা হওয়া বা ছোট হওয়া আবশ্যক করে না। (মাসিক আল-কাউসার:
নভেম্বর ২০১৩)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ شَيْئًا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيَنْصِبْ عَصًا فَإِنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ عَصًا فَلْيَخْطُطْ خَطًّا ثُمَّ لاَ يَضُرُّهُ مَا مَرَّ أَمَامَهُ ”
৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন (কোন খোলা স্থানে) নামায আদায় করে তখন সে যেন তার সামনে কিছু (সুতরা হিসেবে) রেখে দেয়। কিছু যদি না পায় তাহলে তার লাঠিটা যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি তার সাথে লাঠিও না থাকে, তাহলে যেন সামনের মাটিতে একটা দাগ টেনে দেয়। এরপর তার সামনে দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করলেও তার (নামাযের) কোন ক্ষতি হবে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৮৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৯৪৩)
তাহকীক: ইবনে হিব্বান রহ. তার সহীহ ইবনে হিব্বানে ২৩৭৬ নং হাদীসে। আলী ইবনুল মাদীনী রহ. শারহুয যুরাকশি আ’লা মুখতাসারিল খারকীর ২/১২৫ নং হাদীসে। ইমাম আহমদ রহ.শারহুয যুরাকশি আ’লা মুখতাসারিল খারকীর ২/১২৫ নং হাদীসে উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। এ ছাড়াও ইবনে হাজার আসকালানী বুলুগুল মারামে ৭০ নং হাদীসে, উক্ত হাদীসকে হাসান বলেছেন। ইবনে বায তার ফাতোয়ায়ে ইবনে বাযের ৯/৩১৭ পৃষ্ঠাতে এর সনদকে জাইয়েদ বলেছেন।
উপরোক্ত হাদীসটিকে যদিও উল্লেখিত মুহাদ্দিসগণ সহীহ বলেছন তবে উল্লেখযোগ্য কিছু মুহাদ্দিসের অভিমত হলো, হাদিসটির মান যয়ীফ তথা দুর্বল। তাছাড়া ফিকহী অনেক কিতাবেও দাগ টেনে সুতরা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। (ফাতোয়ায়ে হিন্দিয়্যা ১/১০৪, আল-বাহরুর রায়েক ২/১৯)
উল্লেখিত কুরআনের আয়াত, হাদীস ও ফিকহী কিতাবের আলোকে আমাদের যথার্থ মনে হয়। যদি সুতরা বানানোরমত কোনো কিছু পাওয়া না যায়। তাহলে সুতরার স্থানে দাগ না টেনে কমপক্ষে টুপিটা হলেও রাখবে। আর যেখানে কোনো মানুষ যাওয়া আসার ভয় থাকবে না। সেখানে যদি টুপি রাখাও সম্ভব না হয় তাহলে সুতরার স্থানে মাটিতে একটি
দাগ টেনে নিবে। আর এই দাগই তখন সুতরার স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply