সালাতুল হাজত নামাযের কোনো ভিত্তি আছে কি ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, আমাদের সমাজের অনেকেই বিশেষ প্রয়োজনের সময় সালাতুল হাজত নামায পড়ে থাকেন। এখন আমার প্রশ্ন হলো সালাতুল হাজত নামাযের কোনো ভিত্তি আছে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

একজন মুসলমান যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মুখোমুখী হবে। অথবা ছোট বড় কোন প্রয়োজন দেখা দিবে। কিংবা কোন বিপদ মসিবত থেকে মুক্তি চাইবে। তখন তার কর্তব্য হলো দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে দুআ করা। যাতে আল্লাহ তার মনের বাসনা পূরণ করেন। আর এই নামাযের নামই হচ্ছে সালাতুল হাজত। এই নামায আদায় করার ভিন্ন কোন নিয়ম নেই। অন্যান্য নফল নামাযের মতই দুই রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবে। আর এ বিষয়টি কুরআনের আয়াত ও অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং সালাতুল হাজত নামায ভিত্তিহীন বা বিদআত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَالصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ

১.অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৫৩)

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَقَدْ رَأَيْتُنَا لَيْلَةَ بَدْرٍ، وَمَا مِنَّا إِنْسَانٌ إِلا نَائِمٌ، إِلا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَإِنَّه كَانَ يُصَلِّي إِلَى شَجَرَةٍ، وَيَدْعُو حَتَّى أَصْبَحَ.

২.অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি বদরযুদ্ধের রাতে দেখেছি, আমরা সকলে ঘুমিয়ে আছি কেবল রসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত। তিনি একটি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত নামায পড়ছিলেন এবং দুআ করছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১১৬১ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى

৩.অর্থ: হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম (ﷺ) কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামায আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩১৯ হাদীসের মান: হাসান)

قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ تَوَضَّأَ، فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ يُتِمُّهُمَا، أَعْطَاهُ اللهُ مَا سَأَلَ مُعَجَّلًا، أَوْ مُؤَخَّرًا.

৪.অর্থ: আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ বলতে শুনেছি (ﷺ) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর পূর্ণাঙ্গরূপে দুই রাকাত নামায আদায় করে। আল্লাহ তাআলা তাকে তার প্রার্থিত বিষয় দান করবেন। শীঘ্রই অথবা কিছুকাল পর। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৭৪৯৭ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) বলেন,
হাদীসটির সনদ হাসান। শাওকানী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এই হাদীসটি হাসান। (তাযকিরাতুল মাউযুআত ৫০, আল- ফাওয়াইদুল মাজমুআ ৪০, নাতাইজুল আফকার ফী তাখরীজি আহাদীসিল আযকার ৫/১৫০)

উল্লেখ্য, সালাতুল হাজত বিষয়ে সুনানে তিরমিযী ৪৭৯ ও সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৮৪ নং হাদীসে যে বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত একটি বর্ণনা এসেছে। তা শাস্ত্রীয় মান বিচারে বর্ণনাটি যয়ীফ বা দুর্বল। তবে এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি সহীহ বর্ণনা এসেছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং সালাতুল হাজত যে বিশুদ্ধ একটি আমল এতে কোনো সন্দেহ নেই।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর লিখনে- মোঃ সানজিদ আরেফিন চিশতি।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *