প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বাচ্চা জন্ম হলে আযান ও ইকামত উভয়টি দিতে হবে কি ? দ্রুত উত্তর দিলে খুশি হতাম।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
সন্তান জন্ম হওয়ার পর শিশুর কানে নিম্ন আওয়াযে আযান দেওয়া সুন্নত। যে আযান দিবে সে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে তার কানের কাছে আযানের শব্দগুলো বলবে। অথবা একজন কোলে নিবে অপরজন আযান দিবে। চায় নবজাতক ছেলে হোক অথবা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই হালকা আওয়াযে আযান দেওয়া সুন্নত। তবে ইকামতের বিষয়টি যেই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেই হাদীসটি যয়ীফ। আর ফযীলতের ক্ষেত্রে সকল গ্ৰহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের মতে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায়। সুতরাং ইকামতের হাদীসটি যেহেতু ফযীলত সম্পর্কিত তাই কেউ চাইলে নবজাতকের ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দিতে পারবে। যদি কোন পুরুষ না থাকে তাহলে মহিলারাও আযান ইকামত দিতে পারবে। তবে হায়েয অথবা নেফাসগ্রস্থ হলে আযান-ইকামত দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। (আল ফাতহুল মুবিন ৩২ আল আজভিবাহ ৪২)
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلاَةِ
১.অর্থ: আবু রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা (রা.) যখন হাসান ইবনে আলী (রা.)-কে প্রসব করলেন, তখন হাসান (রা.)-এর কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১০৫ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১৫১৪)
তাহকীক: ইবনে মুলকীন (রহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহ.) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইমাম নববী (রহ.)ও সহীহ বলেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) হাদীসটি বর্ণনা করে,চুপ ছিলেন আর চুপ থাকলে সেটি তার কাছে সহীহ।(আল বাদরুল মুনীর ৯/৩৪৮,সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫১৪,আল মাজমু’আ ৮/৪৩৪ আবু দাউদ হাদীস নং ৫১০৫)
عَنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ وُلِدَ لَهُ مَوْلُودٌ فَأَذَّنَ فِي أُذُنِهِ الْيُمْنَى، وَأَقَامَ فِي أُذُنِهِ الْيُسْرَى رُفِعَتْ عَنْهُ أُمُّ الصَّبِيَّاتِ
২.অর্থ: হুসাইন ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যদি কারো সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তারপর সে সন্তানের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়, তাহলে তাকে উম্মুস সিবয়ান (জীন) ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। (শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং ৮২৫৪, মুসনাদে আবী ইয়ালা হাদীস নং ৬৭৮০)
তাহকীক: ইরাকী (রহ.) বলেন এর সনদ যয়ীফ,বাইহাকী (রহ.) বলেন এর সনদে দুর্বলতা আছে,বুসিরী (রহ.) বলেন হাদীসটির সনদ যয়ীফ, ইমাম সুয়ূতী (রহ.) বলেন, হাদীসটি যয়ীফ। (তাখরীজুল ইয়াহইয়া ২/৬৯, শুয়াবুল ঈমান ৬/২৮৮৮,ইতহাফুল খিয়ারহ ৫/৩২৯,জামে সগীর ৯৬৬)
উপরোক্ত হাদীস ও আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে,নবজাতকের যে কোন কানে শুধু আযান দেওয়া সুন্নত। চায় নবজাকত ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। উভয়ের ক্ষেত্রে নিম্ন আওয়াযে আযান দিতে হবে। কোন ভাবেই নামাযের আযানেরমত উঁচু আওয়াযে আযান দিবে না। কারণ এতে বাচ্চা ভীষণ ভয় পেয়ে যেতে পারে। তবে কেউ চাইলে ফযীলত লাভের জন্য ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামতও দিতে পারবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- সিদ্দিকুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply