প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! কোন দলিলের ভিত্তিতে শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে অযু ভেঙ্গে যায় জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
অযু ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ হলো, শরীর থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় রক্ত প্রবাহিত হওয়া। যারা বলে শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে অযু ভেঙ্গে যায় না। তাদের উক্ত কথা সঠিক নয়। কারণ কুরআন এবং সহীহ হাদীসে শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে অযু ভেঙ্গে যায় মর্মে অনেক দলিল রয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
قُلۡ لَّاۤ اَجِدُ فِیۡ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیَّ مُحَرَّمًا عَلٰی طَاعِمٍ یَّطۡعَمُہٗۤ اِلَّاۤ اَنۡ یَّکُوۡنَ مَیۡتَۃً اَوۡ دَمًا مَّسۡفُوۡحًا اَوۡ لَحۡمَ خِنۡزِیۡرٍ فَاِنَّہٗ رِجۡسٌ
১.অর্থ: আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন আহারকারীর জন্যে, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত জন্তু কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত হয়, তাহলে নিশ্চয় তা নাপাক। (সূরা আন’আম আয়াত নং ১৪৫)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত আয়াতে প্রবাহিত রক্তকে নাপাক বলা হয়েছে। উল্লেখ্য শরীর থেকে নাপাক বের হলে অযু ভেঙ্গে যায়। সুতরাং শরীরের কোন জায়গা হতে রক্ত প্রবাহিত হলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।
عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ أَبِي حُبَيْشٍ، أَنَّهَا كَانَتْ تُسْتَحَاضُ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا كَانَ دَمُ الْحَيْضَةِ فَإِنَّهُ دَمٌ أَسْوَدُ يُعْرَفُ فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَأَمْسِكِي عَنِ الصَّلاَةِ فَإِذَا كَانَ الآخَرُ فَتَوَضَّئِي وَصَلِّي فَإِنَّمَا هُوَ عِرْقٌ
২.অর্থ: ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, তার ইস্তেহাযা হলে নবী (সা.) তাকে বললেন, হায়েযের রক্ত কালো বর্ণের হয়, তা দেখলে চেনা যায়। এমতবস্থায় তুমি নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। আর যখন অন্য রকম রক্ত হয় তখন অযু করে নামায আদায় করবে। কারণ তা একটি রগ থেকে নির্গত রক্ত। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২৮৬ সহীহ বুখারী হাদীস নং ২২৮ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রক্ত প্রবাহের কারণে অযুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় রক্ত অযু ভঙ্গকারী।
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَعَفَ انْصَرَفَ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَجَعَ فَبَنَى وَلَمْ يَتَكَلَّمْ
৩.অর্থ: নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত: যখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর নাক দিয়ে রক্ত বের হত, তখন তিনি নামায হতে ফিরে যেতেন। অতঃপর অযু করতেন এবং পুনরায় এসে অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন, আর তিনি এই অবস্থায় কথা বলতেন না। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস নং ৭৬ হাদীসের মান: সহীহ)
তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির সনদ সহীহ। বায়হাকী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। (তাখরীজু শারহিস সুন্নাহ ৩/২৭৮, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী ২/২৫৬)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْوُضُوءُ مِمَّا خَرَجَ، وَلَيْسَ مِمَّا دَخَلَ
৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল ﷺ বলেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয় এ কারণে অযু ভেঙ্গে যায়। আর প্রবেশের দ্বারা ভঙ্গ হয় না। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং ৫৬৮)
তাহকীক: আইনী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইবনে কাত্তান (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান কিংবা সহীহ। (নুখবুল আফকার ২/৬১ আল-ওয়াহমু ওয়াল ইবহাম ৫/৩২৪)
এই দলিলগুলো পর্যালোচনা করলে সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে, শরীর থেকে যে কোন ভাবে রক্ত প্রবাহিত হলেই অযু ভেঙ্গে যাবে। এমনকি নামাযের মধ্যেও রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে গেলে অযু ভেঙ্গে যাবে। যদি রক্ত বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা হয়। আর তা একত্র করলে গড়িয়ে পড়ার সমান হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ শামসুদ্দিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply