প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! সম্মানিত মুফতী সাহেব আমার প্রশ্ন হলো, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে কি অযু ভেঙ্গে যায় ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
অযু ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ থাকলেও লজ্জাস্থান স্পর্শ করার দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না। কারণ সেটি আমাদের শরীরের হাত,পা,চোখ, কান,ও নাকের মতো একটি অঙ্গ। নাক স্পর্শ করলে যেমন অযু ভঙ্গ হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলেও অযু ভঙ্গ হবে না। যদি এটি নাপাকই হতো, তাহলে সর্বদাই মানুষের শরীর নাপাক হিসেবে গণ্য হতো। মানুষের হাঁটতে চলতে স্বাভাবিকভাবে লজ্জাস্থানে হাত যেয়ে থাকে। এখন যদি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণে অযু ভঙ্গ হয়। তাহলে মানুষের জন্য বারবার অযু করাটা কষ্টকর হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
১.অর্থ: আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৮৫)
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
২.অর্থ: আল্লাহ তাআলা সাধ্যের বাহিরে কারও উপর কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৮৬)
قَيْسَ بْنَ طَلْقٍ الْحَنَفِيَّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ سُئِلَ عَنْ مَسِّ الذَّكَرِ فَقَالَ ” لَيْسَ فِيهِ وُضُوءٌ إِنَّمَا هُوَ مِنْكَ ”.
৩.অর্থ: তালক ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট লজ্জাস্থান স্পর্শ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। তিনি বলেন, তাতে অযুর প্রয়োজন নেই। কেননা তা তোমার দেহের একটি অঙ্গ। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪৮৩ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَدِمْنَا عَلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَ رَجُلٌ كَأَنَّهُ بَدَوِيٌّ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا تَرَى فِي مَسِّ الرَّجُلِ ذَكَرَهُ بَعْدَ مَا يَتَوَضَّأُ فَقَالَ ” هَلْ هُوَ إِلاَّ مُضْغَةٌ مِنْهُ ” أَوْ قَالَ “بَضْعَةٌ مِنْهُ”
৪.অর্থ: কায়েস ইবনে তালক তার পিতার সূত্রে বর্ণিত: একদা আমরা নবী (সা.) এর নিকট গমন করি। এমন সময় সেখানে একজন গ্রাম্য লোক আসলো। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অযু করার পর যদি কোন ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী ? রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটা তো একটি গোশতের টুকরা অথবা গোশতের খণ্ড মাত্র। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৮২ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلاَ يُصَلِّ حَتَّى يَتَوَضَّأَ ”
অর্থ: বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, কেউ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু না করে নামায পড়বে না। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৮২ হাদীসের মান: সহীহ)
জবাব: ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ এই হাদীসের কয়েকটি জবাব দিয়েছেন। ১.এই হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। ২.লজ্জাস্থান স্পর্শ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ভিতর থেকে মযী,অদী বা এ জাতীয় নাপাক বেরিয়ে আসলে অযু ভেঙ্গে যাবে। ৩.এর দ্বারা মুস্তাহাব পর্যায়ের নির্দেশ বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীসের আলোকে বলেছেন লজ্জাস্থান স্পর্শ করার দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযু ভঙ্গ হয় না। তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলেও অযু ভঙ্গ হবে না। আর এটাই অধিক শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ মত। অবশ্য যদি কামভাব নিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করার পর লজ্জাস্থান দিয়ে কোন কিছু বের হয় তাহলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ সানাউল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply