প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। যোহরের নামাযের সময় কখন শুরু এবং শেষ হয় ? সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
সূর্য যখন মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম দিকে একটু হেলে যায় তখন থেকেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর প্রতিটি জিনিসের মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। বর্তমানে যেহেতু নামাযের সময়সূচীর স্থায়ী ক্যালেন্ডার ও অ্যাপস পাওয়া যায়। তাই সতর্কতা এবং সুবিধার জন্য ক্যালেন্ডার বা অ্যাপসের নিয়ম অনুযায়ী ওয়াক্ত নির্ধারণ করাই উত্তম।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، أَنَّ بِلاَلاً، كَانَ يُؤَذِّنُ الظُّهْرَ إِذَا دَحَضَتِ الشَّمْسُ
১.অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত: সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তো তখন বিলাল (রা.) যোহরের নামাযের আযান দিতেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬০৬ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৩ হাদীসের মান: সহীহ )
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا كَانَ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ ”
২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, গরমের সময় যোহরের নামায শীতল করে (গরমের প্রচণ্ডতা কমলে) আদায় করো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়াতেই হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৩৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬১৭ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রসূলুল্লাহ (ﷺ) যোহর নামায শীতল করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আরব দেশের শহরগুলোতে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা একগুণ হওয়ার সময় প্রচণ্ড গরম বিদ্যমান থাকে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে,বস্তুর ছায়া একগুণ হওয়ার পর যোহর নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব ছায়া একগুণ হওয়ার পরও যেহেতু যোহরের সময় অবশিষ্ট থাকে তাই ঐ সময় আসরের ওয়াক্ত শুরু হবে না। বরং আসরের ওয়াক্ত শুরু হবে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سَأَلَ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ وَقْتِ الصَّلاَةِ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَا أُخْبِرُكَ صَلِّ الظُّهْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ وَالْعَصْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَيْكَ
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাফি (রহ.) আবু হুরায়রা (রা.)-এর নিকট নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে আবু হুরায়রা (রা.) বললেনঃ আমি তোমাকে নামাযের সময়ের সংবাদ দিবো। যোহর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হয়। আর আসর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস নং ৯ হাদীসের মান: হাসান)
ব্যাখ্যা: আসরের ওয়াক্ত যেহেতু ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর শুরু হয় তাই যোহরের ওয়াক্ত ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। কারণ আসরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। যা নিম্নের হাদীস দ্বারা জানা যায়।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ تَحْضُرِ الْعَصْرُ
৪.অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বলেছেন, আসর নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যোহর নামাযের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৯৬ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫২২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ، قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ، فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَبْرِدْ ”. ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ ” أَبْرِدْ ”. حَتَّى رَأَيْنَا فَىْءَ التُّلُولِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ، فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ
৫.অর্থ: আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যোহরের আযান দিতে চাইল। তখন নবী (ﷺ) বললেন,গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নবী (ﷺ) (পুনরায়) বললেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামায আদায়ে) দেরি করতে করতে এত দেরি হল যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন,গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামায আদায় করো। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৩৯ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫৮ হাদীসের মান: সহীহ)
ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ) উক্ত ঘটনায় মুয়াযযিনকে বারবার দেরি করে আযান দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর একথা স্পষ্ট যে প্রথমবার যখন মুয়াযযিন আযান দিতে শুরু করেছিল, নিশ্চয়ই তখন নামাযের ওয়াক্ত হয়েছিল। এরপর বেশ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে আযান দিতে গেলে একাধারে কয়েকবার তাকে বাঁধা দেন। ফলে অনেক বিলম্বে যোহরের নামায আদায় করা হয়েছিল। এতে যে সময় অতিবাহিত হয়েছিল তাতে কোন জিনিসের ছায়া তার একগুণের চেয়ে বেশি না হয়ে পারে না। আবার সাহাবায়ে কেরাম বলেছেন, আমরা টিলার ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম। টিলা চ্যাপ্টা আর ছড়ানো হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে অন্য জিনিসের ছায়া একগুণ হওয়ার পরই টিলার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। অতএব এ দিন রাসূল (ﷺ) একগুণ ছায়ার পর যোহরের নামায আদায় করেছেন। সুতরাং এক একগুণ ছায়ার পরও যোহর নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকে যা এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায়।
মোটকথা যোহর নামাযের শুরু সময় হলো দ্বিপ্রহরের পর সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে তখন থেকে। আর যোহর নামাযের সর্বশেষ সময় হলো প্রত্যেক বস্তুর আসল ছায়া ব্যতীত যখন তার ছায়া দ্বিগুণ হবে সেই সময় পর্যন্ত। তবে অন্য হাদীসে একগুণ ছায়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে। তাই সতর্কতা হলো একগুণ ছায়ার অন্তর্বর্তী যোহর নামায আদায় করবে। আর ওজরবশত হলে দ্বিগুণেও আদায় করতে পারবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply