যোহরের নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। হযরত যোহরের নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম দ্রুত জানালে খুশি হবো।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

সূর্য যখন মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম দিকে একটু হেলে যায় তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর প্রতিটি জিনিসের মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। কিন্তু গরমকালে যোহরের নামায ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দেরি করে পড়া উত্তম আর শীতকালে তাড়াতাড়ি পড়া উত্তম। এই কারণে আমাদের দেশে গরমকালে যোহর নামাযের জামাত দেড়টায় আর শীতকালে সোয়া একটায় অনুষ্ঠিত হয়। তবে শীতকালে আরও একটু আগে আদায় করা উচিত বলে মনে করি।

حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ دِينَارٍ أَبُو خَلْدَةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ، وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ

১.অর্থ: খালেদ ইবনে দীনার আবু খালদাহ্‌ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেক (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ‌ (ﷺ) গরমের সময় (যোহরের নামায) দেরিতে এবং ঠাণ্ডার সময় তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৪৯৯ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৯০৬ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِذَا كَانَ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ ”

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, গরমের সময় যোহরের নামায শীতল করে (গরমের প্রচণ্ডতা কমলে) আদায় করো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়াতেই হয়ে থাকে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬১৭ সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৩৮ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ، قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ، فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَبْرِدْ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ ‏”‏ أَبْرِدْ ‏”‏‏.‏ حَتَّى رَأَيْنَا فَىْءَ التُّلُولِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ، فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ ‏

৩.অর্থ: আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যোহরের আযান দিতে চাইল। তখন নবী (ﷺ) বললেন,গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নবী (ﷺ) (পুনরায়) বললেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামায আদায়ে) দেরি করতে করতে এত দেরি হল যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন,গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামায আদায় করো। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৩৯ সুনানে তিরমিযি হাদীস নং ১৫৮ হাদীসের মান: সহীহ)

উক্ত আলোচনার সারমর্ম হলো, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি জিনিসের মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো সময় যোহরের নামায পড়া যায়। তবে গরমকালে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর একটু দেরি করে, আর শীতকালে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর একটু তাড়াতাড়ি যোহরের নামায আদায় করা উত্তম। কারণ রাসূল (ﷺ) নিজে এমনটি করেছেন এবং উম্মতকেও এভাবে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. আজহারুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *