মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা যাবে কি ?

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম! কেউ মারা গেলে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করা এবং ফুলের তোড়া কবরের উপর বা কবরের পাশে রাখার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

কোন মুসলমান মারা যাওয়ার পর তার কবরের কাছে গিয়ে নীরবতা পালন করা, ফুল দেওয়া, মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি শরীয়ত সম্মত নয়। এগুলো সব কুসংস্কার ও বিজাতীয় সংস্কৃতি। যা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। বরং মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত ব্যক্তিরা ঈসালে সওয়াবের ব্যবস্থা করবে। শরীয়ত সমর্থিত যে কোন নেক কাজের মাধ্যমেই ঈসালে সওয়াব করা যায়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, দুআ-ইস্তিগফার করা, দান-সদকা করা, হজ্ব বা উমরা করা, কুরবানী করা, নামায পড়া, রোযা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

১.অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০৩১ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৪৩৪৭ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ ” اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ التَّثْبِيتَ فَإِنَّهُ الآنَ يُسْأَلُ

২.অর্থ:উসমান ইবনে আফফান (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) যখন কোন মৃত ব্যক্তির দাফন পক্রিয়া সম্পন্ন করতেন, তখন তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন অবিচল থাকতে পারে, তার জন্য দু’আ করো। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩২২১ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ১৩৩ হাদীসের মান: সহীহ)

عَن عَبدِ الرَّحمنِ بنِ العلاءِ بن اللَّجلاجِ أنَّهُ قالَ لِبنيهِ إذا أدخلتُموني قبري فضعوني في اللَّحدِ وقولوا باسمِ اللَّهِ وعلى سنَّةِ رسولِ اللَّهِ ﷺ وسُنُّوا عليَّ التُّرابَ سَنًّا واقرَؤُوا عندَ رأسي أوَّلَ البقرَةِ وخاتِمتَها فإنِّي رأيتُ ابنَ عمرَ يستحِبُّ ذلكَ.

৩.অর্থ: আবদুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা সন্তানদেরকে বলেছেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে কবরে রাখবে এবং বিসমিল্লাহি ওয়ালা সুন্নাতি রসূলিল্লাহ বলে সুন্দরভাবে মাটি বিছিয়ে দিবে। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করবে। আমি ইবনে উমর (রা.) কে তা পছন্দ করতে দেখেছি। (তারিখে ইবনে মায়ীন, দূরী সংকলিত ২/৩৭৯-৩৮০)

তাহকীক: ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। ইমাম নববী (রহ.)ও বলেছেন এর সনদ হাসান। (আদদাআওয়াতুল কাবীর ২/২৯৭; নাতাইজুল আফকার ৪/৪২৬)

مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ ” .

৪.অর্থ: রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মাঝে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উচিত হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নতের অনুসরণ করা, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবে। আর সাবধান থাকবে, নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদ’আত। আর প্রতিটি বিদ’আতই গোমরাহী। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬ হাদীসের মান: সহীহ)

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَابْ
উত্তর প্রদানে-মুহা. সাইফুল ইসলাম খান।
শিক্ষার্থীঃ মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শায়েখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *