প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো, মুসাফির ব্যক্তি নামাযের ইমামতি করতে পারবেন কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মুসাফির ব্যক্তি যেই এলাকায় যাবে সেই এলাকার লোকই ইমামতি করবে, তখন মুসাফির ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামায পড়বে। তবে মুসাফির ব্যক্তি ব্যতীত ইমামতি করারর মত মুকিম কোন যোগ্য ব্যক্তি না থাকলে। স্থানীয়দের অনুমতিক্রমে মুসাফির ইমামতি করতে পারবেন। আর যদি যোগ্য মুকিম ব্যক্তি থাকে, তাহলে মুকিম ব্যক্তিই নামায পড়ানো উত্তম। মুসাফির ইমামতি করার সময় কসর করবে অর্থাৎ যোহর, আসর ও ইশার ফরয নামাযকে দুই রাকাত করে পড়ে সালাম ফিরাবে। আর স্থানীয়রা ইমামের সালাম ফিরানোর পর উঠে একা একা বাকি দুই রাকাত নামায পড়বে। মুসাফির ইমাম যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পড়েন তাহলে স্থানীয়রা দ্বিতীয় বৈঠকের পর ইমামের ইক্তিদা ছেড়ে দিয়ে নিজে নিজে বাকি নামায পড়ে নিবে।
قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ، فَكَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ. قُلْتُ أَقَمْتُمْ بِمَكَّةَ شَيْئًا قَالَ أَقَمْنَا بِهَا عَشْرًا
১.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.) এর সঙ্গে মদীনা থেকে মক্কায় গমণ করি। আমরা মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি ( চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায ) দুই রাকাত, দুই রাকাত আদায় করেছেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা মক্কায় কত দিন ছিলেন ? তিনি বললেন, আমরা সেখানে দশ দিন ছিলাম। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১০৮১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪৫৯ হাদীসের মান: সহীহ)
فَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا صَلَّى مَعَ الإِمَامِ صَلَّى أَرْبَعًا وَإِذَا صَلاَّهَا وَحْدَهُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ
২.অর্থ: আবু বকর ইবনে আবী শায়বা (রহ.) থেকে বর্ণিত: ইবনে উমর (রা.) যখন ইমামের সঙ্গে নামায পড়তেন, তখন চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন।(ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ صَلَّيْتُ الظُّهْرَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا، وَبِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ
৩.অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে মদীনায় যোহরের নামায চার রাকাত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় আসরের নামায দুই রাকাত আদায় করেছি। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১০৮৯ হাদীসের মান: সহীহ)
وَلاَ يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
৪.অর্থ: আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যেন তার ইমামতির স্থানে তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার ব্যক্তিগত আসনে না বসে। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪০৬ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ২৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হল যে, মুসাফির ব্যক্তি ইমামতি করতে পারবেন। মুসাফিরের জন্য যেহেতু চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দুই রাকাত ফরয। তাই মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের ইমাম হলে দুই রাকাত আদায় করে সালাম ফিরাবে। তখন যদি কোন মুকিম মুসল্লী থাকে তাহলে তিনি একাকী বাকি দুই রাকাত আদায় করে নিবে। আর ইমাম এবং মুসল্লী সবাই মুসাফির হলে শুধু দুই রাকাত আদায় করবে। কিন্তু মুসল্লীদের মধ্যে যদি মুসাফির মুকিম উভয় শ্রেণীর মানুষ থাকে। তাহলে মুসাফির ইমামের কর্তব্য হলো চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের ইমামতি করার পূর্বে মুকিম মুসুল্লীদের বলে দিবে। আমি সালাম ফিরানোর পরে আপনারা বাকি নামায একাকী আদায় করে নিবেন। এতে অনেক সাধারণ মুসুল্লী নামাযে ভুল হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- নিজাম উদ্দিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply