প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! অনেক মসজিদে দেখা যায় ইমাম নামায শেষে উচ্চস্বরে দু’আ করেন অথচ তখন মাসবুক মুসল্লীরা নামায পড়ছে।তো এই পরিস্থিতিতে এভাবে উচ্চস্বরে দু’আ করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মসজিদেই ফরয নামায শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ করা হয়। এভাবে দুআর বৈধতা নিয়ে যদিও সামান্য বিতর্ক আছে, তবে বিশুদ্ধ দলিল অনুযায়ী এভাবে দুআ করা বৈধ। আর এই দুআ উচ্চস্বরে বা নিম্মস্বরে উভয় পদ্ধতিতেই করা জায়েয। তবে মাসবুক বা একাকী নামায আদায়কারী থাকলে উঁচু আওয়াযে দুআ করা ঠিক নয়। কারণ এতে মাসবুক মুসল্লীদের নামাযে মনোযোগ নষ্ট হওয়ার এবং কিরাতে ভুল হওয়ার আশংকা থাকে। সুতরাং মসজিদে কেউ নামায পড়তে থাকলে উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, দু’আ, তাসবীহ ইত্যাদি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য নিম্নস্বরে এই সমস্ত আমল করাতে কোন অসুবিধা নেই। মোট কথা মসজিদে আমল করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কোন মানুষের যেন তার ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ تَضَرُّعًا وَّخُفۡیَۃً ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ۚ
১.অর্থ: তোমরা বিনীতভাবে ও চুপিসারে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক। নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘন- কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ: আয়াত নং ৫৫)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ : اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ : ” أَلاَ إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلاَ يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلاَ يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ ” . أَوْ قَالَ : ” فِي الصَّلاَةِ “
২.অর্থ: আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে ইতিকাফ করাকালীন সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করতে শুনলেন। তখন তিনি পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই তার প্রতিপালকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। কাজেই তোমরা একে অন্যকে (উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করে) কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে কিরাতে বা নামাযে আওয়ায উঁচু করো না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৩৩২ হাদীসের মান: সহীহ)
عَن ابْن عمر والبياضي قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِي رَبَّهُ فَلْيَنْظُرْ مَا يُنَاجِيهِ بِهِ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ»
৩.অর্থ: হযরত ইবনে ওমর এবং (আব্দুল্লাহ ইবনে আনাস রা.) বায়াযী হতে বর্ণিত। তারা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নামাযী ব্যক্তি
তার প্রতিপালকের সাথে নিরিবিলিভাবে আলাপরত হয়। সুতরাং তার লক্ষ্য করা উচিত যে, সে তাঁর সাথে কী আলাপ করছে? অতএব একজনের কুরআন পাঠকালে অপর একজন যেন সরবে কুরআন পাঠ
না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ৮৫৬ হাদিসের মান সহীহ)
উল্লেখিত সহীহ হাদীস দুটিতে আমরা দেখতে পেলাম যে, রাসূল (ﷺ) কুরআন পাঠ করার মত গুরুত্বপূর্ণ আমলকে পর্যন্ত উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করতে বারণ করেছেন, যাতে অন্যের ইবাদতে ব্যাঘাত না ঘটে। তাহলে উচ্চস্বরে দুআ করে অন্যের ফরয নামাযে ব্যাঘাত ঘটানো তো অনুচিত তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং নামাযী ব্যক্তির পাশে উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, তাসবীহ পাঠ, কথা বলা এবং দুআ করা উচিত নয়। অতএব ইমামের জন্য মাসবুক মুসল্লী বা মুনফারিদ থাকা অবস্থায় উচ্চস্বরে দুআ করা ঠিক নয়। তবে নিম্নস্বরে দুআ করতে কোন বাধা নেই।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply