প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! অনেকেই মাথা মাসাহের পদ্ধতি এভাবে বর্ণনা করেন যে, প্রথমে তিন আঙ্গুল সামনের দিক থেকে পিছনে নিবে। এরপর হাতের তালু পিছন থেকে সামনের দিকে আনবে। বাকি দুই আঙ্গুল দিয়ে কান মাসাহ করবে। এভাবে মাথা মাসাহ করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত জানতে চাই ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অযু। অযুর চারটি ফরযের মধ্যে অন্যতম একটি ফরয হলো মাথা মাসাহ করা। মাথা মাসাহ করার উত্তম ও সুন্নত পদ্ধতি হলো, উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ এবং তালু মাথার অগ্রভাগে রেখে গর্দান পর্যন্ত টেনে নেওয়া। এরপর উভয় হাত পুনরায় পেছন থেকে সামনের দিকে টেনে আনা। কানের ভিতরের দিক শাহাদাত আঙ্গুল ও বাইরের দিক বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা মাসাহ করা।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ
১.অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, আর মাথা মাসাহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করো। (সূরা মায়েদা আয়াত: নং ৬)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ ثُمَّ ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا حَتَّى رَجَعَ إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ
২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) তাঁর দুই হাত দিয়ে মাথা মাসাহ করলেন। অর্থাৎ হাত দুটি সামনে ও পিছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে হাত দুটি মাথার গর্দান পর্যন্ত নিলেন। এরপর হাত দুটি আবার যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। তারপর তাঁর দুই পা ধুইলেন। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩২ সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৮৫ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَغَرَفَ غَرْفَةً فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَغَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَغَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ وَأُذُنَيْهِ بَاطِنِهِمَا بِالسَّبَّاحَتَيْنِ وَظَاهِرِهِمَا بِإِبْهَامَيْهِ ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَغَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَغَسَلَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى
৩.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অযু করেন (অর্থাৎ উভয় হাত ধৌত করেন)। তিনি এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নেন এবং মুখমন্ডল ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম হাত ধৌত করেন। তারপর মাথা ও কান মাসাহ করেন। কানের ভেতর দিক শাহাদাত অঙ্গুলী ও বাহির দিক বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মাসাহ করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পা ধৌত করেন এবং এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করেন। (ইফা. সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০২ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৪৩৯ হাদীসের মান: হাসান)
উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়। সম্পূর্ণ মাথা হাতের সবগুলো আঙ্গুল ও তালু দ্বারা একবার মাসাহ করতে হবে। আর মাসাহের শুরুতে হাতের কিছু অংশ আলাদা করে রাখতে হবে এ কথাটি ঠিক নয়। কুরআন বা হাদীসে এমন কোন পদ্ধতি উল্লেখ হয়নি। বরং ফিকহের বিভিন্ন কিতাবে এই পদ্ধতিকে ভুল বলা হয়েছে। সুতরাং আমাদের হাদীসের নিয়ম অনুসারে মাথা মাসাহ করা উচিত। (ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৫, ফাতহুল কাদীর ১/১৭, আস- সিআয়াহ ১/১৩৩, মাআরিফুস সুনান ১/১৭৫, ফয়যুল বারী ১/২৯৪, আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ১/২৬)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আব্দুল হালিম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply