প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। শাইখ আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আপনার কাছে জানতে চাই মাগরিবের আযানের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝামাঝি সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে কেউ পড়লে জায়েয আছে। রাসূল (ﷺ) কখনো এ নামায পড়েননি এবং সাহাবীদেরকেও এ নামায পড়ার জন্য জোরালোভাবে আদেশ করেননি। তাই খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না। বরং তারা মাগরিবের আযানের পর পরই জামাত শুরু করে দিতেন। অবশ্য আযানের পর নামাযের প্রস্তুতি জন্য যদি সামান্য সময় পাওয়া যায়। তাহলে এ সময়ে কেউ চাইলে দু’আ করতে পারেন। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেছেন আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ কবুল হয়।
عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ سُئِلَ ابْنُ عُمَرَ عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ، قَبْلَ الْمَغْرِبِ فَقَالَ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّيهِمَا . وَرَخَّصَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَصْرِ
১.অর্থ: তাউস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রা.)-কে মাগরিবের নামাযের পূর্বে দুই রাকাত নামায আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে আমি কাউকেই তা আদায় করতে দেখিনি এবং আমি কাউকে আসরের পরে দুই রাকাত নামায আদায়ের ব্যাপারেও অনুমতি দিতে দেখিনি। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১২৮৪)
তাহকীক: বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইবনুল মুলাক্কিন (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। (উমদাতুল কারী ৭/৩৫৮ আল-বাদরুল মুনীর ৪/২৯২)
عَن عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَن أَبيهِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: بين أَذَانَيْنِ صَلاةٌ إلاَّ الَمْغَرِبَ
২.আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ (রা.) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক দুই আযান (আযান ও ইকামত) এর মাঝে (নফল) নামায রয়েছে মাগরিব নামায ছাড়া। (মুসনাদুল বাজ্জার হাদীস নং ৪৪২২ আল-মুজামুল আওসাত হাদীস নং ৮৩২৮)
তাহকীক: বিশিষ্ট মুহাদ্দিস বাজ্জার (রহ.) বলেন, এতে হিব্বান বিন উবায়দুল্লাহ রয়েছেন। যিনি মাশহুর। যার মাঝে কোন সমস্যা নেই। (আল-বাহরুর যুখার ১০/৩০৩)
سَأَلْتُ إِبْرَاهِيمَ عَنِ الصّلَاةِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ فَنَهَانِي عَنْهَا، وَقَال: إِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لَمْ يُصَلّوهَا
৩.অর্থ: হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান (রহ.) বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী (রহ.)-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বকর, উমর (রা.)
এই নামায পড়তেন না। (কিতাবুল আসার ১/১৬৩)
তাহকীক: শুয়াইব আরনাউত (রহ.) বলেন এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত। (তাখরীজু মুশকিলিল আসার ২৫৫০)
عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: «كُنَّا نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَغْرِبَ إِذَا تَوَارَتْ بِالحِجَابِ»
৪.অর্থ: সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, সূর্যাস্তের সাথে সাথেই আমরা নবী (ﷺ) এর সঙ্গে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৬১ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৬৮৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” لاَ يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ ”
৫.অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ কখনো ফিরিয়ে দেয়া হয় না (অর্থাৎ দু’আ কবুল করা হয়)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২১ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২১২ হাদীসের মান: সহীহ)
মোটকথা মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে
সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের কোনো নামায নেই। বরং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মাগরিবের নামায তাড়াতাড়ি আদায়ের কথা বলেছেন। সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদীনও এ সময় কোনো নামায পড়তেন না। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও সাধারণত এ সময় নামায পড়তেন না। তাই উত্তম হলো আযানের পর বিলম্ব না করে জলদি ফরয নামাযের জামাত শুরু করা।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ নাঈম আহমদ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply