প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! আমার জানার বিষয় হলো, অনেকেই বলে মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম। তাদের এই কথা কতটুকু সহীহ ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
যারা বলেন মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম তাদের এই কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সঠিক কথা হলো, মসজিদ ইবাদতের স্থান। দুনিয়াবী আলাপ আলোচনার স্থান নয়। তাই দুনিয়াবী কথাবার্তার জন্য মসজিদে গমন করা বৈধ নয়। তবে যদি মসজিদে ইবাদতের জন্য প্রবেশ করে, তারপর দ্বীনি প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলে, তাহলে সেটা যদি কারো ইবাদতে বিঘ্নতা সৃষ্টি না করে তাহলে জায়েয। এ ব্যাপারে হাদীসের কিতাবসমূহে সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে। যেমনঃ-
عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، قَالَ قُلْتُ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَكُنْتَ تُجَالِسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ كَثِيرًا كَانَ لاَ يَقُومُ مِنْ مُصَلاَّهُ الَّذِي يُصَلِّي فِيهِ الصُّبْحَ أَوِ الْغَدَاةَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ قَامَ وَكَانُوا يَتَحَدَّثُونَ فَيَأْخُذُونَ فِي أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ فَيَضْحَكُونَ وَيَتَبَسَّمُ
১. অর্থঃ সিমাক ইবনে হারব (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনে সামুরা (রাযি.)-কে বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে বসতেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বহুবার। তারপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে স্থানে ফজরের অথবা বলেছেন ভোরের নামায আদায় করতেন, সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকতেন। তারপর যখন সূর্য উদিত হতো তখন তিনি নামাযে দাঁড়াতেন। আর লোকেরা সেথায় জাহিলী যুগের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলত ও (জাহিলী রুসুম নিয়ে) হাসাহাসি করত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মুচকি হাসতেন।(ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩৯৯ হাদীসের মান: সহীহ। সুনানে নাসায়ী হাদীস নং ১৩৬১ হাদীসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، – وَهُوَ عَمُّ إِسْحَاقَ َ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَىْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلاَةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ ” . أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
২. অর্থঃ আনাস ইবনে মালিক (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “দেখ এই যে মসজিদগুলো এতে পেশাব করা বা একে কোন রকম নাপাক করা উচিত নয়। এ সব তো কেবল আল্লাহর যিকির করা, নামায আদায় করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য”। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৫৪ হাদীসের মান:সহীহ)
وَعَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَكُونُ حَدِيثُهُمْ فِي مَسَاجِدِهِمْ فِي أَمْرِ دُنْيَاهُمْ. فَلَا تُجَالِسُوهُمْ فَلَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ
৩. অর্থ: হযরত হাসান বসরী (রহ.) হতে এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকদের সাথে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই। (ইফা. মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৭৪৩ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ التَّحَلُّقِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ قَبْلَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الشِّرَاءِ وَالْبَيْعِ فِي الْمَسْجِدِ
৪. অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আমব ইবনে আস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমআর দিন নামাযের পূর্বে বৃত্তাকারে বসতে এবং মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (ইফা. সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৭১৫ হাদীসের মান: হাসান)
উপরোক্ত হাদীসসমূহের দ্বারা বুঝা গেল দ্বীনি প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথা বলা জায়েয। এছাড়া আমাদের সমাজে যে প্রচলিত আছে,”মসজিদে কেউ প্রথমবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন,
হে আল্লাহর বন্ধু ‘আপনি’ চুপ করুন। আবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বান্দা ‘তুমি’ চুপ কর। তৃতীয়বার কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর দুশমন ‘তুই’ চুপ কর।’ এ বর্ণনাটি কোন কোন লোককে হাদীস বলে উল্লেখ করতে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে এটি হাদীস নয়। হাদীসের কিতাবসমূহে এটা পাওয়া যায় না বরং এটা জাল হাদীস। এ ছাড়া আরেকটি বর্ণনা আছে যে, “মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে”। এ বক্তব্যটিও হাদীসের কিতাবসমূহে পাওয়া যায় না। বরং এটাও হাদীসের নামে জাল উক্তি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সঠিক বিষয় জেনে আমল করার তাওফিক দান করুন।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আরিফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply