মনে মনে নিয়ত করার পাশাপাশি মুখে নিয়ত বলা যাবে কি ? 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম! কেউ কেউ বলেন, মনে মনে নিয়ত করতে হবে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বিদআত তাই করা যাবে না। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মনের সন্দেহ দূর করার জন্য আমি মনে মনে নিয়ত করার পাশাপাশি মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে পারবো কি ?

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

নিয়ত মানে ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। উল্লেখ্য ইচ্ছা বা সংকল্পের স্থান হলো মন। অতএব মনে মনে যে কোন কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করাই হল নিয়ত। অযুর শুরুতে নিয়ত করা বা অন্য কোন আমলের ক্ষেত্রেও নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়তের উপর নির্ভরশীল। উল্লেখ্য অযু,নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, কুরবানী বা অন্য কোন আমলের নিয়তের জন্য,আরবীতে কিংবা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরী নয়। বরং যে কোন ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। অবশ্য অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি কেউ যদি খটকা দূর করার জন্য মুখে নিয়ত বলে, তাহলে সেটাও জায়েয আছে। যারা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করাকে বিদআত বলে, এটা তাদের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ মুখে নিয়ত বলাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

 

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، قَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ ” هَلْ عِنْدَكُمْ شَىْءٌ ” . فَقُلْنَا لاَ . قَالَ ” فَإِنِّي إِذًا صَائِمٌ ” . ثُمَّ أَتَانَا يَوْمًا آخَرَ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أُهْدِيَ لَنَا حَيْسٌ . فَقَالَ ” أَرِينِيهِ فَلَقَدْ أَصْبَحْتُ صَائِمًا ” . فَأَكَلَ

 

১.অর্থ: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) আমার কাছে এসে বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে আমি রোযা রাখলাম। আর একদিন তিনি আমাদের কাছে আসলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে ‘হায়স’ (ঘি বা পনির মিশ্রিত খেজুর) হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, আমাকে তা দেখাও অবশ্য আমি সকালে রোযার নিয়ত করেছি। অতঃপর তিনি তা খেলেন। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৫৮৬ হাদীসের মান: সহীহ)

 

قَالَ أَنَسٌ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لَبَّيْكَ بِعُمْرَةٍ وَحَجٍّ “

 

২.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি। আমি উমরা ও হজ উভয়ের ইহরাম বাঁধছি। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৮৯৯ হাদীসের মান: সহীহ)

 

وَقَالَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ كَانَ أَبُو الدَّرْدَاءِ يَقُولُ عِنْدَكُمْ طَعَامٌ فَإِنْ قُلْنَا لاَ. قَالَ فَإِنِّي صَائِمٌ يَوْمِي هَذَا. وَفَعَلَهُ أَبُو طَلْحَةَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ وَابْنُ عَبَّاسٍ وَحُذَيْفَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ

 

৩.অর্থ: উম্মে দারদা (রা.) বলেন, আবু দারদা (রা.) তাঁকে এসে জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে ? আমরা যদি বলতাম, নেই, তাহলে তিনি বলতেন, আমি আজ রোযা রাখলাম। আবু তালহা, আবু হুরায়রা, ইবনে আব্বাস এবং হুযায়ফা (রা.) অনুরূপ করতেন। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৮০২ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الأَضْحَى بِالْمُصَلَّى فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وَأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ وَقَالَ ” بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي “

 

৪.অর্থ: জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমি রসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবা শেষে মিম্বার থেকে নামলেন। একটি বকরী আনা হলো। রসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে জবাই করেন এবং বলেন, বিসমিল্লাহ আল্লহু আকবার, এই কুরবানী আমার ও আমার উম্মতের যারা কুরবানী করতে অক্ষম তাদের পক্ষ হতে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২৮০১ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫২৭ হাদীসের মান: সহীহ)

 

মোটকথা অন্তরে নিয়ত করার পাশাপাশি মুখে উচ্চারণ করে বলাও জায়েয। কোন কোন ইমাম সাহেবকে বলতে শুনা যায় যে, তারা বলেন, যারা আরবীতে নিয়ত পারি তারা আরবীতে নিয়ত করি আর যারা বাংলাতে পারি বাংলাতে করি। অথচ আরবীতে নিয়ত করা জরুরী নয়। বরং যে কোন ভাষায় মনে মনে ঐ আমলের ইচ্ছা করাই নিয়ত হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্য কারো যদি অন্তরে নিয়ত করার দ্বারা সন্দেহ লাগে নিয়ত করেছি কি করিনি। তাহলে সে সন্দেহ দূর করতে অন্তরের পাশাপাশি মুখেও উচ্চারণ করে নিয়ত বলতে পারবে। এই ক্ষেত্রে আরবীতে না বলে নিজ মাতৃভাষায় বলা ভালো। এতে আরবী বলতে গিয়ে তাকবীরে উলা ছুটার এবং আরবী ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। 

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- নুর মোহাম্মদ।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *