প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত মুফতী সাহেব, আমার প্রশ্নের উত্তরটি দলিলসহ জানালে অনেক উপকার হয়। প্রশ্নটি হলো মনী, মযী ও অদীর মধ্যে পার্থক্য কী এবং এর বিধান কী ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
পুরুষাঙ্গ থেকে সাধারণত যা বের হয়, তা পেশাব ছাড়া তিন প্রকার,যথাঃ মনী,মযী ও অদী। শুধু মনী দ্বারা গোসল ফরয হবে বাকি দুইটা দ্বারা গোসল ফরয হবে না তবে অযু ভেঙ্গে যাবে। আর তিনটাই কাপড় বা শরীরের কোথাও লাগলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে ফেলতে হবে। তিনটার মধ্যেই রয়েছে বিশেষ পার্থক্য ও বিধান তা হলো:-
১.চরম উত্তেজনার মুহূর্তে অথবা স্বপ্নদোষ হলে যে গাঢ় বা তরল পদার্থ নির্গত হয় এবং তা বের হওয়ার পর পুরুষাঙ্গ দুর্বল হয়ে যায় তাকে মনী বা বীর্য বলে। স্ত্রী সঙ্গম,স্বপ্নদোষ অথবা অন্য যে কোন কারণেই এটা বের হোক না কেন, তার জন্য গোসল করা ফরয। আর কাপড় বা শরীরের কোথাও লাগলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে ফেলতে হবে কারণ মনী নাপাক।
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمَذْىِ فَقَالَ ” مِنَ الْمَذْىِ الْوُضُوءُ وَمِنَ الْمَنِيِّ الْغُسْلُ ”
অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মযী সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন, মযী বের হলে অযু করতে হবে আর মনী বের হলে গোসল করতে হবে। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১১৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৯৩ হাদীসের মান: সহীহ)
سُلَيْمَانَ بْنَ يَسَارٍ عَنِ الْمَنِيِّ، يُصِيبُ ثَوْبَ الرَّجُلِ أَيَغْسِلُهُ أَمْ يَغْسِلُ الثَّوْبَ فَقَالَ أَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَغْسِلُ الْمَنِيَّ ثُمَّ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ فِي ذَلِكَ الثَّوْبِ وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَى أَثَرِ الْغَسْلِ فِيهِ
অর্থ: সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সা.) কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতেন। তারপর সেই কাপড় পরেই নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন। আর আমি (পেছন থেকে) তার কাপড়ের ভেজা অংশটুকু স্পষ্ট দেখতে পেতাম। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৩০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৬৫ হাদীসের মান: সহীহ)
২. চরম উত্তেজনা ব্যতীত স্ত্রীকে আদর সোহাগের সময় অথবা যৌন চিন্তার কারণে যে পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত হয় এবং তা বের হওয়ার পর পুরুষাঙ্গ দুর্বল হয় না তাকে মযী বলে। এটা বের হলে গোসল ফরয হয় না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যায়। আর কাপড় বা শরীরের কোথাও লাগলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে ফেলতে হবে কারণ মযীও নাপাক।
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ كُنْتُ رَجُلاً مَذَّاءً وَكُنْتُ أَسْتَحْيِي أَنْ أَسْأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لِمَكَانِ ابْنَتِهِ فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ بْنَ الأَسْوَدِ فَسَأَلَهُ فَقَالَ “ يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ
অর্থ: আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হতো। আমি এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। কারণ তাঁর কন্যা ছিল আমার বিবাহধীন। তাই আমি মিকদাদ ইবনে আসওয়াদকে (এ সম্পর্কে জানতে) বললাম, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন নবী (সা.) বললেন, সে তার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে এবং অযু করে নেবে। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৩৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৮৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، قَالَ كُنْتُ أَلْقَى مِنَ الْمَذْىِ شِدَّةً وَكُنْتُ أُكْثِرُ مِنْهُ الاِغْتِسَالَ فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ ” إِنَّمَا يُجْزِيكَ مِنْ ذَلِكَ الْوُضُوءُ ” . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَكَيْفَ بِمَا يُصِيبُ ثَوْبِي مِنْهُ قَالَ ” يَكْفِيكَ بِأَنْ تَأْخُذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَتَنْضَحَ بِهَا مِنْ ثَوْبِكَ حَيْثُ تُرَى أَنَّهُ أَصَابَهُ ” .
অর্থ: সাহাল ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমার প্রচুর মযী নির্গত হতো। ফলে অধিকাংশ সময় আমি গোসল করতাম। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মযী বের হওয়ার পর অযু করাই যথেষ্ট। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার কাপড়ে মযী লাগলে কি করবো ? তিনি বললেন, এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কাপড়ের যে স্থানে মযী লেগেছে বলে মনে হবে, ঐ স্থান পানি দ্বারা ধুয়ে ফেললেই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২১০ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৫০৬ হাদীসের মান: হাসান)
৩.কোনরূপ উত্তেজনা ব্যতীত পেশাবের আগে বা পরে কিংবা কোথ দিলে বা বোঝা বহন করলে অথবা রোগের কারণে যে সাদা ও গাঢ় পদার্থ বিনা বেগে নির্গত হয় তাকে অদী বলে। এটাও বের হলে গোসল ফরয হয় না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যায়। আর কাপড় বা শরীরের কোথাও লাগলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে ফেলতে হবে কারণ মনী ও মযীর মত অদীও নাপাক।
اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে এবং অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২২২)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «هُوَ الْمَنِيُّ وَالْمَذْيُ وَالْوَدْيُ» فَأَمَّا الْمَذْيُ وَالْوَدْيُ فَإِنَّهُ يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ , وَأَمَّا الْمَنِيُّ , فَفِيهِ الْغُسْلُ “
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মনী, মযী ও অদী (এর বিধান নিম্নরূপ) মযী এবং অদী বের হলে পুরুষাঙ্গ ধৌত করবে এবং অযু করবে। কিন্তু ‘মনী’ বের হলে তাতে গোসল করতে হবে। (তহাবী শরীফ, হাদীস নং ২৫৯ হাদীসের মান: হাসান)
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- ফজলুর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply