প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! কেউ কেউ বলেন, “ব্রাশ করলেও নাকি মিসওয়াকের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে”! তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক ও দলিল সম্মত জানতে চাই।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
যারা ব্রাশকে মিসওয়াকের বিকল্প বা সমপর্যায়ের মনে করেন তাদের ধারণা সঠিক নয়। কারণ নবী (সা.) থেকে মিসওয়াকের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তা শুধু মিসওয়াকের জন্য খাস। সুতরাং মিসওয়াক করা যে একটি আলাদা সুন্নত তা খুব স্পষ্ট। চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলে ব্রাশ মিসওয়াকের সমপর্যায়ের না। কারণ প্রায় সব টুথপেস্টই দাঁতের ক্ষতি করে থাকে। দাঁতের ক্ষতি করে না এবং দাঁতের জন্য উপকারী এমন টুথপেস্ট নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও সকালে ও রাতে মাত্র এক দুই বার ব্রাশ করা হয়ে থাকে। আর প্রতি ওয়াক্ত নামাযের অযুর জন্য পকেটে ব্রাশ ও পেস্ট রাখাও দুষ্কর। তাই মিসওয়াকের সাথে ব্রাশের প্রসঙ্গ টেনে আনা কোন ভাবেই ঠিক নয়। অবশ্য কেউ যদি মুখ পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করে তাহলে মুখ পরিষ্কারের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে !
عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي، لَأَمَرْتُهُمْ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ بِوُضُوءٍ ومَعَ كُلِّ وُضُوءٍ بِسِوَاكٍ
১. অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের উপর আমি যদি কঠিন মনে না করতাম। তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় অযু করার আদেশ করতাম এবং প্রত্যেক অযুর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস নং ২০০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৮২ হাদীসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنَا أَنَسٌ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَكْثَرْتُ عَلَيْكُمْ فِي السِّوَ
২.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি মিসওয়াক করার ব্যাপারে তোমাদের সর্বাধিক উৎসাহিত করছি। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৪৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৬ হাদীসের মান: সহীহ)
عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ “
৩. অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (সা.) বলেছেন, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উপায়।(ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৩৮১ হাদীসের মান: সহীহ)
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَفْضُلُ الصَّلَاةُ الَّتِي يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلَاةِ الَّتِي لَا يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِينَ ضعفا
৪.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মিসওয়াক করে আদায় করা নামাযের ফযীলত সেই নামাযের তুলনায় সত্তর গুণ বেশি, যে নামাযের পূর্বে মিসওয়াক করা হয়নি। (ইফা. মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ৩৮৯ হাদীসের মান: যঈফ)
উল্লেখিত হাদীসটি যঈফ হওয়া সত্ত্বেও এর উপর আমল করা যাবে। কারণ সকল গ্ৰহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের মতে ফযীলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যায়। (আল ফাতহুল মুবিন ৩২ আল আজভিবাহ ৪২)
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ
৫.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রথমেই মিসওয়াক করতেন। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৮৪ হাদীসের মান: সহীহ)
আমাদের মতে এই বিতর্কের সুন্দর সমাধান হলো, ব্রাশ ব্যবহারের পাশাপাশি ছোট আকারের একটি মিসওয়াক সার্বক্ষণিক কলমের মতই পকেটে রাখা যেতে পারে। এতে প্রত্যেক নামাযের সময় অযুর পূর্বে মিসওয়াক করে হাদীসে বর্ণিত ফযিলত লাভ করা সহজ হবে। এর সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতের উপরও আমল হয়ে যাবে। সুতরাং টুথব্রাশ ব্যবহারের পাশাপাশি মিসওয়াক ব্যবহার করা সর্বোত্তম হবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- আব্দুল কুদ্দুস।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply