প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! বিতের নামাযের পর বসে দুই রাকাত নফল নামায পড়া কতটুকু শরীয়ত সম্মত ? দলিলসহ জানালে খুশি হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
নফল নামাযের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হলো, দাঁড়ানোর শক্তি-সামর্থ্য থাকলে নফল নামায দাঁড়িয়ে আদায় করাই উত্তম। অবশ্য কোনো ওজর না থাকলেও নফল নামায বসে আদায় করাও জায়েয আছে। তবে দাঁড়িয়ে আদায় করলে পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যায়। কেউ যদি ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করে তাহলে অর্ধেক সওয়াব পাবে। কিন্তু ওজরের কারণে নফল নামায বসে পড়লে সওয়াব কম হবে না। সুতরাং বিতের নামাযের পর বসে অথবা দাঁড়িয়ে উভয় ভাবেই দুই রাকাত নফল নামায পড়া যাবে।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَانَ يُصَلِّي بَعْدَ الْوِتْرِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ .
১.অর্থ: উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (ﷺ) বিতেরের নামাযের পর বসা অবস্থায় হালকাভাবে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১১৯৫ সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৪৭১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ هَلْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي وَهُوَ قَاعِدٌ قَالَتْ نَعَمْ بَعْدَ مَا حَطَمَهُ النَّاسُ
২.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বসা অবস্থায় (নফল) নামায আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; মানুষের দায়িত্ব ভারে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর থেকে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭৩২ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৫৭ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ حَفْصَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا حَتَّى كَانَ قَبْلَ وَفَاتِهِ بِعَامٍ فَكَانَ يُصَلِّي فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا وَكَانَ يَقْرَأُ بِالسُّورَةِ فَيُرَتِّلُهَا حَتَّى تَكُونَ أَطْوَلَ مِنْ أَطْوَلَ مِنْهَا
৩.অর্থ: হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বসে নফল নামায আদায় করতে দেখিনি। অবশেষে তার ইন্তিকালের এক বছর আগে থেকে (দুর্বলতার জন্য) নফল নামায বসে আদায় করতেন (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৩ হাদীসের মান: সহীহ)
حَدَّثَنِي عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ – وَكَانَ مَبْسُورًا – قَالَ: سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلاَةِ الرَّجُلِ قَاعِدًا، فَقَالَ: «إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا، فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ القَائِمِ، وَمَنْ صَلَّى نَائِمًا، فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ القَاعِدِ».
৪.অর্থ: ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন অর্শরোগী, তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বসে নামায আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যদি কেউ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে তবে তাই উত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে নামায আদায় করবে, তার জন্য দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব আর যে শুয়ে আদায় করবে তার জন্য বসে আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১১৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১২২৯ হাদীসের মান: সহীহ)
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক সওয়াব হয়। আর দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ সওয়াব হয়। সুতরাং বিতেরের পর দুই রাকাত নামায যেহেতু নফল, তাই সক্ষমতা থাকা অবস্থায় তা দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম। তবে দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে পড়লে সওয়াবের কোনো কমতি হবে না।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ মুরাদ হাসান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply