বমি করলে কি ওযু ভেঙ্গে যায় ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ! এক বইতে আছে বমি হলে অযু ভাঙ্গে না। লেখকের উক্ত দাবি কতটুকু গ্ৰহণযোগ্য দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

অযু ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো মুখ ভরে বমি হওয়া। যদি অল্প অল্প করে বারবার বমি হয়। আর সেই বমিগুলোকে একত্র করলে মুখ ভর্তি বমির সমপরিমাণ হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে। যারা বলে বমি করলে অযু ভঙ্গ হয় না তাদের দাবি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاءَ فَأَفْطَرَ فَتَوَضَّأَ . فَلَقِيتُ ثَوْبَانَ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ صَدَقَ أَنَا صَبَبْتُ لَهُ وَضُوءَهُ

১.অর্থ: আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত: একদা রাসূল (ﷺ) এর বমি হলো,তাই তিনি ইফতার করে অযু করলেন। দামিশকের মসজিদে সাওবান (রা.) এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলে তাঁর কাছে এ ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, আবু দারদা (রা.) ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি রাসূল (ﷺ) এর অযুর পানি ঢেলে দিয়েছিলাম। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৮৭ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৭৩ হাদীসের মান: সহীহ)

قَالَ أَبُو عِيسَى وَقَدْ رَأَى غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ مِنَ التَّابِعِينَ الْوُضُوءَ مِنَ الْقَىْءِ وَالرُّعَافِ

ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী (রহ.) উক্ত হাদীস বর্ণনা করে বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবেঈর মত হলো, বমি করলে কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে অযু নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন করে অযু করতে হয়। (সুনানে তিরমিযীর ৮৭ নং হাদীসের টীকা দ্র.)

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ مَنْ أَصَابَهُ قَىْءٌ أَوْ رُعَافٌ أَوْ قَلَسٌ أَوْ مَذْىٌ فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ ثُمَّ لْيَبْنِ عَلَى صَلاَتِهِ وَهُوَ فِي ذَلِكَ لاَ يَتَكَلَّمُ ‏”‏.‏

২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, নামাযে কারো যদি বমি হয়, অথবা নাক থেকে রক্ত ঝড়ে অথবা মুখ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বেরিয়ে আসে অথবা মযী নির্গত হয়। তাহলে সে যেন ফিরে যায় এবং অযু করে। এরপর পূর্ববর্তী নামাযের উপর ভিত্তি করে নামায আদায় করে। আর এ সময় সে কোন কথা বলবে না। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১২২১)

তাহকীক: যাইলায়ী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। (নাসবুর রায়াহ ১/৩৮)

দুঃখজনক হলেও সত্য, এক শ্রেণির মানুষ এমন স্পষ্ট সহীহ হাদীস থাকতেও,বমি অযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে কোন সহীহ হাদীস খুঁজে পায় না ! আর কিছু মানুষও তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে তার উপর আমল করে যাচ্ছে। অথচ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। যা উপরোক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে বমির পরিমাণ বেশি না হয়ে কম হলে অর্থাৎ মুখ ভরে না হলে অযু ভঙ্গ হবে না।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- জিয়াউর রহমান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।