ফাসেক বা বিদআতী ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করা যাবে কি ?

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! ফাসেক বা বিদআতী ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করা যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

ইসলামের মূল ভিত্তি সমূহের মধ্যে অন্যতম ভিত্তি হলো নামায। তাই নামাযের ইমামতির জন্য এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া উচিত যিনি মুত্তাকী এবং পরহেযগার। কোন ফাসেক বা বিদআতী ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করা এবং তার পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমি তথা নাজায়েয। অবশ্য উপস্থিত লোকদের মধ্যে ফাসেক বা বিদআতী ব্যক্তি ব্যতীত উপযুক্ত কোন লোক না থাকলে। অথবা তাকে বরখাস্ত করতে গেলে ফেতনা ফাসাদের আশংকা হলে। তাহলে বাধ্য হয়ে তার পিছনে নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে তবে নামায মাকরূহে তাহরীমি হবে। কিন্তু এতে মুসল্লীদের কোন গোনাহ হবে না বরং যারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে এবং বরখাস্ত করতে দেয়নি তারা গোনাহগার হবে।

اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ

১.অর্থ: প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। (সূরা হুজরত: আয়াত নং ১৩)

حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلاَ عَدْلاً

২.অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন বিদআতী কর্মে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তার ফিরিশতাদের
ও সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৮৭০ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩১৭০ হাদীসের মান: সহীহ)

عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ خِيَارٍ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ ـ رضى الله عنه ـ وَهْوَ مَحْصُورٌ فَقَالَ إِنَّكَ إِمَامُ عَامَّةٍ، وَنَزَلَ بِكَ مَا تَرَى وَيُصَلِّي لَنَا إِمَامُ فِتْنَةٍ وَنَتَحَرَّجُ‏.‏ فَقَالَ الصَّلاَةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ، فَإِذَا أَحْسَنَ النَّاسُ فَأَحْسِنْ مَعَهُمْ، وَإِذَا أَسَاءُوا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ‏.‏

৩.অর্থ: উবাইদুল্লাহ ইবন আদী ইবন খিয়ার (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উসমান ইবন আফফান (রা.) অবরুদ্ধ থাকাকালে তার নিকট গিয়ে বললেন, প্রকৃতপক্ষে আপনিই জনগনের ইমাম। আর আপনার বিপদ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামতি করছে কখনো বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গোনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বলেন, মানুষের আমলের মধ্যে নামাযই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাঁদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৯৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَن السَّائِب بن خَلاد – وَهُوَ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ رَجُلًا أَمَّ قَوْمًا فَبَصَقَ فِي الْقِبْلَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْظُرُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ فَرَغَ: «لَا يُصَلِّي لَكُمْ»

৪.অর্থ: সায়েব ইবনে খাল্লাদ (রা.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জনৈক সাহাবী একদল লোকের ইমামতি করছিল। সে কিবলার
দিকে থু থু নিক্ষেপ করল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা দেখলেন। নামায শেষ হবার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দলকে বললেন, এই ব্যক্তি যেন আর কখনও তোমাদের নামায না পড়ায়। (সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৪৮১ মিশকাতুল মাসাবীহ: হাদীস নং ৭৪৭ হাদীসের মান: সহীহ)

ব্যাখ্যা: আপাতঃদৃষ্টে কিবলার দিকে থুথু ফেলা তেমন গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ইমাম যেহেতু শুধু নামাযেরই ইমাম নন, বরং তার কার্যকলাপও মুসল্লীদের জন্য শিক্ষণীয়। তাই ইমাম এমন লোক হতে হবে যিনি অন্যান্য বিষয়ের সাথে মসজিদের আদবের ব্যাপারেও মনোযোগী ও আন্তরিক হবেন। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে তা নিফাকের দৃষ্টান্তও হতে পারে।

মোটকথা ফাসেক বা বিদআতী ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করা জায়েয নয়। এরপরেও এমন ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামায মাকরূহে তাহরীমি হবে। যদি মুসল্লীদের মধ্যে অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তি না থাকে কিংবা চাপে পরে বাধ্য হয়েই তার পিছনে নামায পড়তে হয়, তাহলে কারাহাতের সাথে নামায আদায় হয়ে যাবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহাম্মদ মুবারক হুসাইন।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *