ফজরের সুন্নত নামায ছুটে গেলে পরে কখন পড়তে হবে ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। ফজরের সুন্নত নামায ছুটে গেলে পরে কখন পড়তে হবে ? ফরয নামাযের পরে নাকি সূর্যোদয়ের পরে ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

যদি কোন ব্যক্তির ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ছুটে যায় তাহলে সে এই দুই রাকাত নামায সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেবে। কেননা সূর্যোদয়ের আগে সুন্নত আদায় করা নাজায়েয।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشَّمْسُ

১.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ফরযের পূর্বে পড়তে পারেনি, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৪২৩ হাদীসের মান: সহীহ )

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ نَامَ عَنْ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ فَقَضَاهُمَا بَعْدَ مَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ ‏.‏

২.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: একবার রাসূল (সা.) ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননি, তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১১৫৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَلاَتَيْنِ بَعْدَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ

৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) দুই সময়ে (সুন্নত নফল) নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৮৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮২৫ হাদীসের মান: সহীহ)

সূর্যোদয়ের আগে ফজরের সুন্নত পড়ার ক্ষেত্রে একটি হাদীস পাওয়া যায় কিন্তু তা স্পষ্ট নয়। নিম্নে হাদীসটির ক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনা দেয়া হল।

عَنْ سَعْدِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ جَدِّهِ، قَيْسٍ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ الصُّبْحَ ثُمَّ انْصَرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدَنِي أُصَلِّي فَقَالَ ” مَهْلاً يَا قَيْسُ أَصَلاَتَانِ مَعًا ” . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَمْ أَكُنْ رَكَعْتُ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ . قَالَ ” فَلاَ إِذًا ”

অর্থ: কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা রাসূল (সা.) (মসজিদে) আসলেন। অতঃপর নামাযের ইকামত দেওয়া হল। আমি তার সঙ্গে ফজরের নামায পড়লাম। নামায থেকে ফিরে তিনি আমাকে নামাযরত দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, হে কায়েস থামো! তুমি দুই নামায এক সাথে পড়ছো কেন ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) আদায় করতে পারিনি। তখন নবী সা.) বললেন তাহলে অসুবিধা নেই বা তবুও অনুমতি নেই। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৪২২)

আমরা ভালো করে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবো যে, উক্ত হাদীস দিয়ে দলিল দেয়া শুদ্ধ হবে না দু’টি কারণে।

১। উক্ত হাদীসের فلا اذن শব্দটি দ্বারা কী উদ্দেশ্য তা স্পষ্ট নয়। এর অর্থ দু’টি হতে পারে। ক. কোন অসুবিধা নেই। খ. তারপরও অনুমতি নেই। সুতরাং যেহেতু স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না নবীজীর فلا اذن শব্দ দ্বারা কী উদ্দেশ্য তাই এটিকে দলিল ছাড়া মেনে নেবার কোন যুক্তি নেই। অন্যদিকে নিষিদ্ধতার হাদীস স্পষ্ট বুঝাচ্ছে যে, এ সময় নামায পড়া জায়েয নয়, এবং এর কাযা করবে সূর্য উদিত হবার পর। যেমন: পূর্বে বর্ণিত বুখারী,মুসলিম, সুনানে তিরমিযীর হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়।

২। উক্ত হাদীসটি মুরসাল তথা এর সূত্র নিরবচ্ছিন্ন নয়। যেমন ইমাম তিরমিযী (রহ.) এই হাদীস বর্ণনা করার পর উক্ত হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করেন- বর্ণনাটি মুরসাল, এর সনদ মুত্তাসিল (নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে) নয়। কেননা মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম কায়েস থেকে শোনেননি।

একটি হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَةُ

অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন ফরয নামায ব্যতীত আর কোন নামায নেই। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭১০ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৮৬৬ হাদীসের মান: সহীহ)

কিছু ভাইয়েরা এই হাদীসটি উল্লেখ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে যে, ফজরের ইকামতের পর ফজরের সুন্নত নামায আদায় করা যাবে না অথচ তাদেরই “আল হাদিস” অ্যাপে নাসাঈর ৮৬৬ নং হাদীসের টীকাতে অনুবাদক লিখেছেন, “ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করার বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া এ নামায আদায় করার যথেষ্ট গুরুত্বও রয়েছে। তাই এই সুন্নত নামায আদায় করে যদি ফজরের ফরয নামাযের এক রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মসজিদের দরজার কাছে কিংবা খুঁটির পিছনে এ নামায আদায় করে জামাতে শরীক হওয়ার বিধান রয়েছে”।

মূলত এ হাদীসটি ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য নামাযের জন্য। ফজরের সুন্নত অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেঈ এই বিধানকে এ থেকে ব্যতিক্রম মনে করেছেন। যার প্রমাণ আমরা এর আগের পূর্বে দিয়েছি। সুতরাং ফজরের জামাত চলা অবস্থায় যে সুন্নত পড়া যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ যদি এই সুযোগ না পায় তাহলে সূর্যোদয়ের পর পড়ে নিবে।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *