প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। শাইখ আশাকরি ভালো আছেন। ফজরের ফরয নামাযে কোন কিরাত পড়া সুন্নত ? দলিলসহ জানালে খুশি হবো।
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
ফজরের ফরয নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল (লম্বা কিরাত) তথা সূরা হুজরত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত এর মধ্য থেকে যে কোন সূরা পাঠ করা সুন্নত।রাসূল (ﷺ) অধিকাংশ সময় ফজরের নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকে তিলাওয়াত করতেন।তবে উক্ত সূরাগুলো ছাড়াও মাঝে মধ্যে ভিন্ন সূরা পড়াও সুন্নত। আর জুম’আর দিন ফজরের নামাযে সূরা আলিফ লাম মীম সাজদা এবং সূরা দাহর তিলাওয়াত করা সুন্নত। অবশ্য নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা হলে কিংবা জামাতে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল ও অসুস্থ লোক থাকলে ছোট সূরাও পড়া যায়। মোটকথা এমন ভাবে কিরাত পড়তে হবে যাতে কারো বিরক্তি না আসে এবং নামায সুন্নত মোতাবেক আদায় হয়ে যায়।
أَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلٰى غَسَقِ الَّيْلِ وَقُرْءَانَ الْفَجْرِ ۖ
১.অর্থ: সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করো এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠে যত্নবান থাকো। (সূরা বনী-ইসরাঈল: আয়াত নং ৭৮)
فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ
২.অর্থ: অতএব কুরআনের যতটুকু (পড়া তোমাদের জন্য) সহজ হয় ততটুকুই পড়ো। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত নং ২০)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ أَحَدٍ أَشْبَهَ صَلاَةً بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ فُلاَنٍ . قَالَ سُلَيْمَانُ كَانَ يُطِيلُ الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ وَيُخَفِّفُ الأُخْرَيَيْنِ وَيُخَفِّفُ الْعَصْرَ وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ بِوَسَطِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ بِطُوَلِ الْمُفَصَّلِ
৩.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাযের সাথে অমুকের চেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ নামায আর কারও পেছনে আদায় করিনি। সূলাইমান (রা.) বলেন, তিনি যোহরের প্রথম দুই রাকাত লম্বা করতেন, শেষের দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর আসরের নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। আর মাগরিবের নামায কিসারে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ইশার নামায আওসাতে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ভোরের নামায অথাৎ ফজর তিওয়ালে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৯৮২ হাদীসের মান: সহীহ)
وَكَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ – أَوْ إِحْدَاهُمَا – مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى المِائَةِ»
৪.অর্থ: আবু বারযা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ফজরের দুই রাকাত বা এক রাকাতে ষাট থেকে একশ আয়াতের মাঝামাঝি পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৭১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৬১ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، . أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِـ ( الم تَنْزِيلُ) فِي الرَّكْعَةِ الأُولَى وَفِي الثَّانِيَةِ ( هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا)
৫.অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) জুমআর দিন ফজরের প্রথম রাকাতে আলিফ লাম মীম তানযীল (সূরা সাজদা) ও দ্বিতীয় রাকাতে হাল আতা (সূরা দাহ্র) পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৯১ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৮০ হাদীসের মান: সহীহ)।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ، قَالَ صَلَّى لَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الصُّبْحَ بِمَكَّةَ فَاسْتَفْتَحَ سُورَةَ الْمُؤْمِنِينَ حَتَّى جَاءَ ذِكْرُ مُوسَى وَهَارُونَ أَوْ ذِكْرُ عِيسَى – مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ يَشُكُّ أَوِ اخْتَلَفُوا عَلَيْهِ – أَخَذَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَعْلَةٌ فَرَكَعَ
৬.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে সাইব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন এবং সূরা মু’মিনূন শুরু করলেন। যখন মুসা ও হারুন (আ.) অথবা ঈসা (আ.) এর নাম সম্বলিত আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাশি আসল। তিনি রুকুতে চলে গেলেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৮২০ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عُقْبَةَ «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ بِهِمَا فِي صَلَاةِ الصُّبْحِ»
৭.অর্থ: উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা নবী (সা.) এক সফরে ফজরের নামাযে “কুল আউযু বি-রব্বিল ফালাক” ও “কুল আউযু বি-রব্বিন নাস” পাঠ করেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫৪৩৫ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ১৪৬২ হাদীসের মান: সহীহ )
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, ফজরের নামাযে দ্বীর্ঘ কিরাত পড়া সুন্নত। কিন্তু বিশেষ সমস্যার কারণে ছোট সূরাও পড়া যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নত অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে: আবু জাফর।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply