ফজরের নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। শাইখ আশাকরি ভালো আছেন। ফজরের নামায কোন সময় আদায় করা উত্তম দলিলসহ জানালে খুশি হবো।

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ফজর নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ পূর্ব আকাশের উত্তর-দক্ষিণে যখন সাদা একটা আলো ছড়ায় তখন ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর সূর্যের কিনারা দেখা পর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকে। তবে ফজর নামাযের উত্তম সময় হলো, সূর্যোদয়ের এতটুকু পূর্বে নামায শুরু করা। যাতে একবার সুন্নত কিরাতসহ নামায পড়ার পর কোন কারণে নামায নষ্ট হয়ে গেলে, পুনরায় সুন্নত কিরাতসহ নামায পড়া যায়‌। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট পূর্বে ফজর নামায শুরু করা উত্তম হবে।

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ سَائِلاً، سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ وَقْتِ الصُّبْحِ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِلاَلاً فَأَذَّنَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ أَخَّرَ الْفَجْرَ حَتَّى أَسْفَرَ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ فَصَلَّى ثُمَّ قَالَ ” هَذَا وَقْتُ الصَّلاَةِ ”

১.অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিলাল (রা.) কে আযান দিতে আদেশ করলেন। বিলাল (রা.) প্রভাত হওয়ার (সুবেহে সাদিকের শুরুতে) সাথে সাথে আযান দিলেন। পরবর্তী দিন ভোর ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামাযে বিলম্ব করলেন। এরপর বিলাল (রা.)-কে ইকামত বলার নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রা.) ইকামত দিলেন এবং নামায আদায় করলেন। তারপর বললেন, এটাই ফজরের নামাযের সময়। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৬৪২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ ”
২.অর্থ: রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা ফজরের নামায (ভোরের অন্ধকার) ফর্সা করে আদায় করো। কেননা তাতে অনেক সওয়াব রয়েছে। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫৪ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪২৪ হাদীসের মান: সহীহ )

ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী (রহ.) উক্ত হাদীস বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীগণের মধ্য হতে এবং তাবেঈগণের মধ্য হতে একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবী
ও তাবেঈ ফজরকে ফর্সা করে আদায় করার মত দিয়েছেন। সুফইয়ান সাওরীও এই মত গ্রহণ করেছেন। (সুনানে তিরমিযীর ১৫৪ নং হাদীসের আলোচনা দ্র:)

ইমাম তিরমিযীর উক্ত বক্তব্য অনুযায়ী বহু সংখ্যক সাহাবী ও তাবেঈ ফর্সা করে ফজর পড়ার প্রবক্তা ছিলেন। সুতরাং যারা বলেন, ফর্সা করে ফজর পড়া জাল হাদীসের ভিত্তিতে এবং সহীহ হাদীসের অপব্যাখ্যা করে পড়া হয়। তাহলে ঐ সকল সাহাবী ও তাবেঈগণও কি জাল হাদীস অনুযায়ী আমল করতেন ? তারাও কি সহীহ হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ফজর পড়তেন ?

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ أَصْبِحُوْا بِالصُّبْحِ فَإِنَّكُمْ كُلَّمَا أَصْبَحْتُمْ بِالصُّبْحِ كَانَ أَعْظَمَ لِأُجُوْرِكُمْ

৩.অর্থ: রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ফজরের নামাযকে আলোকিত করে আদায় করো। কেননা তোমরা ফজরের নামাযকে যত বেশি আলোকিত করে আদায় করবে ততই তা তোমাদের সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হবে। (সহীহ ইবনে হিববান হাদীস নং ১৪৮৯ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ، عَنْ رِجَالٍ، مِنْ قَوْمِهِ مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَا أَسْفَرْتُمْ بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ بِالأَجْرِ ”

৪.অর্থ: মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রহ.) এর মাধ্যমে তাঁর আনসার সম্প্রদায়ের কতিপয় ব্যক্তি হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,ফজরের নামায যতই ফর্সা হওয়ার পর আদায় করবে, ততই তোমাদের অধিক সওয়াবের কারণ হবে। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫৪৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৬৭২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ وَيُصَلِّي الصُّبْحَ إِلَى أَنْ يَنْفَسِحَ الْبَصَرُ

৫.অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) যখন দৃষ্টি বিস্তৃত হতো (অর্থাৎ ভোর ফর্সা হওয়ার কারণে দূর পর্যন্ত দেখা যেত) তখন ফজরের নামায আদায় করতেন। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫৫২ হাদীসের মান: সহীহ )

উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে,ফজরের নামায ফর্সা করে আদায় করা উত্তম। এটাও স্পষ্ট হলো, অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করা অধিক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ এবং উনুত্তম কাজ। আর ফর্সা করে ফজর পড়লে আরেকটা বিশেষ উপকার অধিক মানুষ জামাতে শরিক হতে পারে। তাই উম্মতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে হলেও ফর্সা করে ফজর পড়াই অধিক যুক্তি যুক্ত।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. মাসুম বিল্লাহ।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *