ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে কি?

 

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম! আমার জানার বিষয় হলো, ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে কি ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

সাধারণত ফরয নামাযের জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নতের নিয়ত করা যায় না। তবে ফজরের সুন্নত এর থেকে ব্যতিক্রম। যদি কেউ মসজিদে এসে দেখে ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেছে। এরপর তার মনে হয় অন্যত্র সুন্নত পড়ে জামাতের অন্তত এক রাকাত পাওয়া যাবে। তাহলে সে অন্যত্র সুন্নত পড়েই জামাতে শামিল হবে। কেননা ফজরের সুন্নত অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেঈ ফজরের জামাত চলাকালীন সময়েও সুন্নত পড়েছেন। আর যদি প্রবল ধারণা হয় সুন্নত পড়তে গেলে দুই রাকাতই ছুটে যাবে। তাহলে সুন্নত ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবে। যারা বলে জামাত চলাকালীন সুন্নত নামায পড়া যাবে না। তাদের কথা ঠিক নয় তার প্রমাণ নিচে দেয়া হলো। প্রথমেই আসুন ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস দেখে নেয়।

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ رَكْعَتَانِ لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَعُهُمَا سِرًّا وَلاَ عَلاَنِيَةً رَكْعَتَانِ قَبْلَ صَلاَةِ الصُّبْحِ

১.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন অবস্থাতেই ফজরের ফরয নামাযের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত নামায ছাড়তেন না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯২ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৩৫ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ”

২.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭২৫ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৭৬২ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى شَىْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ مِنْهُ تَعَاهُدًا عَلَى رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ

৩.অর্থ: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী (সাঃ) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাযের এত গুরুত্ব দিতেন যে,অন্য কোন নফল (বা সুন্নত) নামাযের ততটুকু গুরুত্ব দিতেন না। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৬৯ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭২৪ হাদীসের মান: সহীহ)

উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গুরুত্বের দিক থেকে ফজরের পূর্বের দুই রাকাত
সুন্নত নামায অন্যান্য সুন্নত নামায থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূণ। সুতরাং ইকামতের পূর্বে সুন্নত আদায় করা সম্ভব না হলে। জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি এক রাকাত পাওয়া যায়, তাহলে আগে সুন্নত নামায পড়ে নিবে। কারণ বহু সংখ্যক সাহাবী-তাবেঈ এমন আমল করেছেন।

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، حِينَ دَعَاهُمْ سَعِيدُ بْنُ الْعَاصِ، دَعَا أَبَا مُوسَى , وَحُذَيْفَةَ , وَعَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ , قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ الْغَدَاةَ , ثُمَّ خَرَجُوا مِنْ عِنْدِهِ وَقَدْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ , فَجَلَسَ عَبْدُ اللهِ إِلَى أُسْطُوَانَةٍ مِنَ الْمَسْجِدِ , فَصَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ , ثُمَّ دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ ” فَهَذَا عَبْدُ اللهِ قَدْ فَعَلَ هَذَا وَمَعَهُ حُذَيْفَةُ وَأَبُو مُوسَى لَا يُنْكِرَانِ ذَلِكَ عَلَيْهِ , فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى مُوَافَقَتِهِمَا إِيَّاهُ

৪.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ ইবন আস (রা.) যখন আবু মুসা (রা.), হুযায়ফা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)-কে ফজরের নামাযের পূর্বে ডাকলেন। তারা যখন সাঈদ ইবন আস (রা)-এর নিকট থেকে বের হলেন তখন নামাযের ইকামত হয়ে গেছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মসজিদের একটি খুঁটির নিকট বসে গেলেন। সেখানে তিনি দুই রাকাত (সুন্নত) আদায় করলেন। তারপর জামাতের সাথে নামাযে শরীক হলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এরূপ করা সত্ত্বেও হুযায়ফা (রা.) ও আবু মুসা (রা.) তাতে কোন প্রতিবাদ করেননি। এতে বুঝা গেল তারা দুজনও উক্ত ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর পক্ষে ছিলেন। (তহাবী শরীফ হাদীস নং ২১৯৮ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: হায়সামী (রহ.) বলেন, বর্ণানাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য। আল্লামা আইনী (রহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ২/৭৮ নুখবুল আফকার ৩/৬৮২)

عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، قَالَ: دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فِي صَلَاةِ الْغَدَاةِ مَعَ ابْنِ عُمَرَ وَابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ , وَالْإِمَامُ يُصَلِّي. فَأَمَّا ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَدَخَلَ فِي الصَّفِّ , وَأَمَّا ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ , ثُمَّ دَخَلَ مَعَ الْإِمَامِ

৫.আবু মিজলায (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেছেন, একবার আমি ইবন উমর (রা.) ও ইবন আব্বাস (রা.)-এর সাথে ফজরের নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইমাম তখন জামাতে নামায পড়াচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় ইবন উমর (রা.) কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবন আব্বাস (রা.) দুই রাকাত (সুন্নত) পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে (জামাতে) অংশগ্রহণ করলেন। (তহাবী শরীফ: হাদীস নং ২২০০ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেন, ইমাম তহাবী (রহ.) এটি দুটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। (নুখবুল আফকার ৩/৬৮৩)

عَنْ أَبِي عُثْمَانَ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ: جَاءَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ وَالْإِمَامُ فِي صَلَاةِ الْغَدَاةِ , وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ فَصَلَّى عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا الرَّكْعَتَيْنِ خَلْفَ الْإِمَامِ , ثُمَّ دَخَلَ مَعَهُمْ

৬.অর্থ: আবু উসমান আল-আনসারী (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একবার আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামায আদায় না করে মসজিদে এসেছিলেন। আর ইমাম তখন ফজরের নামাযে রত। তারপর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ইমামের পিছনে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে লোকদের সাথে জামাতে শামিল হলেন। (তহাবী শরীফ: হাদীস নং ২২০১ হাদীসের মান: সহীহ)

তাহকীক: আল্লামা আইনী (রহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখবুল আফকার ৬/৭৬)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা জানতে পারলাম যে,কেউ যদি মসজিদে এসে দেখে ফজরের ইকামত বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। আর তার ধারণা হয় যে, সে সুন্নত শেষ করে কমপক্ষে এক রাকাত ধরতে পারবে। তাহলে সে মসজিদের ভিতরে জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা মসজিদের এক প্রান্তে কিংবা খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়ে নিবে। তারপর জামাতে শরীক হবে। কিন্তু অন্যান্য ফরয নামাযের জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নতের নিয়ত করতে পারবে না।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর লিখনে- মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

 

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *