পেশাব করে টিস্যু নিয়ে হাঁটাহাঁটি করার বিধান। 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম ! প্রিয় শায়েখ ! অনেক মানুষকে দেখি তারা ইস্তেনজার সময় টিস্যু হাতে হাঁটাহাঁটি করে, কাশি দেয়,দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে, এখানের কোন বিষয় কি জরুরী বা সুন্নত ? দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। 

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

টিস্যু হাতে হাঁটাহাঁটি করা,কাশি দেওয়া,দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা,কোন জরুরী বিষয় বা সুন্নত নয়। এটি দেখতেও সুন্দর দেখায় না। কিন্তু পেশাবের ফোঁটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং জরুরী। আর এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পেশাবের ফোঁটা যেন শরীরে না লাগে। কারণ হাদীসে পেশাবের ফোঁটার ব্যাপারে সতর্ক না থাকার কারণে কবরে আজাব হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই যাদের পেশাব করার পর পেশাব ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ে, তাদের উচিত, পেশাব শেষ করার পর যতটুকু সময় বসে থাকলে মনে হবে, পেশাব পুরোপুরি ঝরে গেছে ততটুকু সময় বসে থাকবে এবং লজ্জা স্থানকে ঝেড়ে নিবে। তারপর টিস্যু ও পানি উভয়টি ব্যবহার করবে। এর পরেও যদি পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকা হয়। তাহলে অযু করার পর হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিবে। কারণ রসূলুল্লাহ (সা.) যখন পেশাব করতেন,তখন অযু করে লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন। 

 

اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ 

 

১.অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে এবং অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা: আয়াত নং ২২২)

 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـرضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا بِنِصْفَيْنِ، ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً‏.‏ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَ صَنَعْتَ هَذَا فَقَالَ ‏”‏ لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا ‏”‏‏.‏

 

২. অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এদের দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গুনাহর জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বিরত থাকা) দুঃরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগে বিভক্ত করলেন, তারপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বললেনঃ ডাল দু’টি না শুকান পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হালকা করা হবে। (ইফা. সহীহ বুখারী হাদীস নং ১২৭৮ হাদীসের মান: সহীহ)

 

عَنِ الْحَكَمِ بْنِ سُفْيَانَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ وَنَضَحَ فَرْجَهُ ‏‏

 

৩.অর্থ: হাকাম ইবনে সুফইয়ান (রা.) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি অযু করলেন এবং লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটালেন। (ইফা. সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ১৩৫ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪৬১ হাদীসের মান: সহীহ)

 

উল্লেখিত কাজগুলো করার পর আর কোন সন্দেহ রাখার প্রয়োজন নেই। যদি মনে হয় যে,পবিত্র হোননি, তাহলে মনে করবেন, এটি শয়তানের পক্ষ থেকে ধোঁকা। রাসূল (সা.) যে পদ্ধতিতে ইস্তিনজা করেছেন, সেটিই আমাদের কাছে পবিত্রতার সর্বোত্তম মানদণ্ড। এর চেয়ে বেশি পবিত্র হবার চেষ্টা করার নাম আসলে পবিত্রতা নয়, বরং বাড়াবাড়ি। পবিত্রতার ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার পদ্ধতি একই। শুধু পেশাবের ক্ষেত্রে মহিলারা ঢিলা ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- মো. নিজাম উদ্দিন।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *