প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ! জামাতের নামাযে পুরুষও নাবালেগ ছেলেদের কাতারে দাঁড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
জামাতে নামায পড়ার সময় প্রথম কাতারে আলেম-উলামা ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা দাঁড়াবে আর দ্বিতীয় কাতারে নাবালেগ ছেলেরা দাঁড়াবে। তবে যদি বাচ্চাদের পরস্পরে একসাথে হয়ে দুষ্টামি করার আশঙ্কা থাকে তখন বাচ্চাদেরকে বড়দের মাঝে দাঁড় করাবে। যাতে তারা দুষ্টামি করে বড়দের নামাযের বিঘ্নতা সৃষ্টি না করতে পারে। দুইজন পুরুষ মিলে জামাত করলে, ইমাম বামে আর মুক্তাদী ডানে সামান্য পিছনে দাঁড়াবে। আর তিনজন বা তার চেয়ে বেশি পুরুষ হলে, ইমাম সামনে আর মুক্তাদীরা পিছনে দাঁড়াবে।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ غَنْمٍ، قَالَ قَالَ أَبُو مَالِكٍ الأَشْعَرِيُّ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ بِصَلاَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَصَفَّ الرِّجَالَ وَصَفَّ خَلْفَهُمُ الْغِلْمَانَ ثُمَّ صَلَّى بِهِمْ
১.অর্থ: আবু মালিক আল-আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিকট রসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নামায সম্পর্কে বর্ণনা করব না? অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়ান এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষেরা কাতারবদ্ধ হন। অতঃপর অপ্রাপ্ত বয়স্করা তাদের পেছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তিনি তাদের সাথে নিয়ে নামায পড়েন। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস ৬৭৭ হাদীসের মান: হাসান)
তাহকীক: ইবনে মুলাককিন (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির সনদ হাসান। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। বায়হাকী (রহ.) বলেন, এই হাদীসটির সনদ শক্তিশালী। (তুহফাতুল মুহতাজ ১/৪৫৯, আল-খুলাসা ২/৭১৪ আস-সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী ৩/৯৭)
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلاَةِ وَيَقُولُ “ لاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ لِيَلِيَنِي مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ” .
২.অর্থ: আবু মাসউদ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) নামাযের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, তোমরা (কাতারে) আগে পিছে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর এলোমেলো হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তারা (কাতারে) আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর (যোগ্যতায়) তাদের নিকটতর লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটতর লোকেরা দাঁড়াবে। (ইফা. সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৯৭৬ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৫৮ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قُمْتُ لَيْلَةً أُصَلِّي عَنْ يَسَارِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي أَوْ بِعَضُدِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ، وَقَالَ بِيَدِهِ مِنْ وَرَائِي
৩.অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি নামায আদায়ের জন্য নবী (ﷺ) এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, আমার পেছনের দিক দিয়ে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২৮ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬৬৭ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الْوَلِيدِ بْنِ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ أَتَيْنَا جَابِرًا – يَعْنِي ابْنَ عَبْدِ اللَّهِ – قَالَ سِرْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ فَقَامَ يُصَلِّي وَكَانَتْ عَلَىَّ بُرْدَةٌ ذَهَبْتُ أُخَالِفُ بَيْنَ طَرَفَيْهَا فَلَمْ تَبْلُغْ لِي وَكَانَتْ لَهَا ذَبَاذِبُ فَنَكَسْتُهَا ثُمَّ خَالَفْتُ بَيْنَ طَرَفَيْهَا ثُمَّ تَوَاقَصْتُ عَلَيْهَا لاَ تَسْقُطُ ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ.
৪.অর্থ: উবাদা ইবনে সামিত (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে কোন এক যুদ্ধে যাই। তিনি নামায আদায় করতে দাঁড়ালেন। এ সময় আমার গায়ে একটি ছোট চাঁদর ছিল। আমি তা আমার কাঁধের দুই পাশে রাখার জন্য চেষ্টা করি, কিন্তু তা ছোট থাকায় কাঁধ পর্যন্ত পৌছেনি। আমার চাঁদরের লম্বা আচল ছিল, আমি সামান্য নত হয়ে ঐ আচলদ্বয় (কাঁধের) উপর এমনভাবে বেঁধে দেই, যাতে তা সরে না পড়তে পারে। অতঃপর এ অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাম পাশে গিয়ে নামাযে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করান। এ সময় ইবনে সাখর (রা.) এসে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ান। অতঃপর তিনি নিজের দুই হাত আমাদের উভয়কে ধরে তাঁর পিছনে দাঁড় করান। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৬৩৪ হাদীসের মান: সহীহ)
উল্লেখ্য অনেক মানুষের এ ধারণা রয়েছে যে, নাবালেগ শিশুদের বড়দের কাতারের মধ্যে দাঁড় করালে পিছনের মুসল্লীদের নামায হয় না। অথবা নামায ত্রুটিযুক্ত হয় আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। যদিও জামাতের কাতারের সাধারণ নিয়ম হলো, প্রাপ্তবয়স্করা সামনে দাঁড়াবে আর অপ্রাপ্তবয়স্করা পিছনে দাঁড়াবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে নামায অশুদ্ধ হবে এটা ভিত্তিহীন। সুতরাং শিশু একা হলে কিংবা পিছনে দুষ্টামির আশঙ্কা হলে বড়দের কাতারে মাঝে দাঁড় করানোই উত্তম।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply