পুরাতন ছেঁড়া কুরআন কী করা উচিত ? 

 

 

 প্রশ্নঃ

 

আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্ন হলো,পুরাতন ছিঁড়ে যাওয়া কুরআন কি আগুনে পুড়ানো যাবে? কোন কোন আলেম বলেন আগুনে পুড়ানো যাবে তাদের এই কথা কি সঠিক? মেহেরবানী করে দলিলসহ জানালে খুশি হবো।

 

উত্তরঃ

 

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

 

কুরআন মাজিদ যদি অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে ছিঁড়ে যায় বা পড়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়। তখন এর করণীয় সম্পর্কে একাধিক মতামত পাওয়া যায়।

 

১.পবিত্র কুরআনের পুরাতন কপিগুলো তিলাওয়াতের অনুপযুক্ত হয়ে গেলে যত্ন সহকারে সরিয়ে নিতে হবে। এরপর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে দাফন করে দিতে হবে। তবে এমন জায়গায় দাফন করতে হবে, যেখানে মানুষের চলাচল নেই। অথবা অবমাননা হওয়ার আশঙ্কা নেই।

 

২. যদি দাফন করা সম্ভব না হয়, তাহলে ভারী কোনো বস্তুর সঙ্গে বেঁধে গভীর কোনো জলাশয়ে অথবা প্রবাহিত নদীতে ডুবিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, স্রোতের কারণে যেন পানিতে ভেসে ওঠে অসম্মানজনক কিছু না হয়।

 

৩.যদি উল্লেখিত দুই পদ্ধতির কোন একটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয়। তাহলে কুরআনের ইজ্জত রক্ষার্থে পাতাগুলো সুন্দর করে জ্বালিয়ে তার ছাই মাটিতে দাফন করে দিবে। অথবা পানিতে ভাসিয়ে দিবে। তবে আগুনে পুড়ানোর ব্যাপারে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করেন। সঠিক কথা হলো আগুনে পুড়ানোও জায়েয। এ ব্যাপারে সহীহ বুখারীতে স্পষ্ট হাদীসও রয়েছে। যেমনঃ-

 

عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ حَدَّثَهُ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّيْنَ الثَلَاثَةِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ أَنْتُمْ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فِيْ شَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ فَاكْتُبُوْهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوْا حَتَّى إِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلَى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوْا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْآنِ فِيْ كُلِّ صَحِيْفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ

 

অর্থ: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। 

তিনি বলেন, উসমান (রা.) তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন ব্যাপারে যদি যায়েদ ইবনে সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। সুতরাং তারা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লেখা হয়ে গেল, তখন উসমান (রা.) মূল লিপিগুলো হাফসা (রা.) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ-সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এছাড়া আলাদা আলাদা বা একত্রিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (ইফা. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬২৬ হাদীসের মান: সহীহ)

 

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত কুরআনুল কারীমের পাণ্ডুলিপি পড়ার অনুপযুক্ত হলে তা উল্লেখিত নিয়মের যে কোনো একটিতেই হেফাজত করা জরুরী। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পুরাতন, ছেঁড়া কিংবা পড়ার অনুপযুক্ত পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب

উত্তর প্রদানে- আব্দুল কুদ্দুস।

শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।

পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।  

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *